নগরজুড়ে হাটবাজার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে

সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনেরও পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর সকালে থলে নিয়ে বাজার করার সময়ও মানুষের নেই। সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে যেতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে অধিকাংশকে। ফলে বাজারের জন্য আলাদা সময় বের করা এখন অনেকের জন্য কঠিন। ফলে বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে বাসা বা বাড়ি ফেরার সময় পথ বা ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করে ফেরা দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। এতে অনেকের সুবিধা হচ্ছে বটে কিন্তু তাতে শহরজুড়ে একপ্রকার অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিত্তবানরা যাচ্ছেন নতুন গড়ে ওঠা সুপারস্টোরে। যেখানে সবকিছু এক ছাদের নিচেই পাওয়া যায়।
বিশ্বের সব আধুনিক শহরে কাঁচাবাজার বা কিচেনমার্কেট আলাদাভাবে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয়। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তারা এমন ব্যবস্থা করে থাকেন। সড়কের পাশে কখনো প্রকাশ্যে মাছ-মাংস মুরগি বিক্রি হয় না, কাটাকাটিও হয় না। সেসব নগরে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পশু জবাই নিষিদ্ধ। তারপরও ওসব দেশে ফুটপাতে খাবার বা ফলমূল-শাক-সবজি বিক্রি হলেও তাদের একটি সুবিধা হলো পরিবেশগত। তাদের নগরীতে এত ধুলিবালু নেই ফলে সে খাদ্যগুলো দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাও কম। আমাদের দেশে সড়কজুড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। সড়কের পাশে উন্মুক্ত নালা। বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি এবং সঙ্গে আছে নানারকম রোগজীবাণু। এর সমস্ত কিছুই জমা হচ্ছে মাছ-সবজি-ফলের ওপর। বিক্রেতারা কিছুক্ষণ পরপর তার ওপর পানি ছিটান তাতে ধুলিবালি আরও গাঢ় হয়ে বসে শাক-সবজির ওপর। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে এই বাজারের বর্জ্য, মাছের পানি, কাটা মাছের বর্জ্য ইত্যাদির কারণে আশেপাশের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা এই পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন।
নগরবাসী মাত্রই জানেন এখন নগরজুড়েই হাটবাজার। অলি-গলি থেকে প্রধান সড়কের ফুটপাত এবং সড়কের অংশ কাঁচাবাজারের ভ্যানগাড়িতে জ্যাম থাকে। কিছু এলাকায় বিকেলের পর থেকে বাজার বসা শুরু হয়ে যায় আর কিছু এলাকায় সকাল থেকেই বেচা-কেনা চলে। কিছু এলাকাতো রীতিমতো বাজারে পরিণত হয়ে গেছে।
বর্তমানে মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। জীবনযাপনেও পরিবর্তন এসেছে। শহর দিনদিন প্রশস্ত হচ্ছে। শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান সময়কে ৩০/৪০ কিংবা ৫০ বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যায় না। সে সময় মানুষের জীবনযাত্রা বর্তমানের মতো এতটা ব্যস্ত ও কর্মময় ছিল না। মানুষ সকালে স্থানীয় কাঁচাবাজারে যেতো এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতো। এর জন্য শহরে কিছু কাঁচাবাজার ছিল। যেমন বক্সিরহাট, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী মার্কেট, কাজির দেউড়ি বাজারসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বাজার ছিল। বাজারগুলো মূলত সিটি করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত হতো। বাজারগুলো ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন প্রচুর রাজস্বও আদায় করতো।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম শহরটিও গড়ে উঠেছে পরিকল্পনাহীনভাবে। অপরিকল্পিত নগরায়নের অনেক কুফল আমরা ভোগ করছি। নগরজুড়ে হাটবাজার বসা সে পরিকল্পনাহীনতারই একটি অংশ। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। বাজারের জন্য, হকারদের জন্য কিছু নিয়মনীতি বেঁধে দিতে হবে। দেরি হয়ে গেলেও কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া দরকার। নগরকে বাসযোগ্য করতে, নগরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে সিটি করপোরেশনকেই অগ্রণী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আর নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সিটি মেয়র সে দায় এড়াতে পারেন না।