দেশের মানুষকে ভোট দেবার সুযোগ দিন

নগরীতে সমাবেশে মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ দেশের মানুষ ভোটের অধিকার পায় না, খাবারের অধিকার পায় না, মত প্রকাশের অধিকার পায় না এমনকি নিরাপত্তা লাভের অধিকারও পায় না। আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলেছে। এবার দয়া করে এই খেলা থামতে দিন। দয়া করে দেশের মানুষকে এবার ভোট দেবার সুযোগ দিন। আর যদি তা না হয় দেশের মানুষ জানে কিভাবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ভোট আদায় করতে হয়। সুতরাং আবারো বলবো দেশের মানুষকে ভোট দেবার সুযোগ দিন।’
গতকাল রোববার দুপুর ২ টায় নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের মহা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এই চট্টগ্রাম প্রীতিলতা, ক্ষুধিরাম, মাষ্টারদা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম। এ চট্টগ্রামের মানুষের আন্দোলনের ঢেউ আমাকে প্রেরণা দেয়। আজকে চট্টলার মানুষের তরঙ্গ সারা বাংলাদেশের কাছে কি বার্তা দিতে চায়? তারা এক দফা দাবির মাধ্যমে এই সরকারের পতনের ডাক দিতে চায়। তারা জানাতে চায় এ সরকার জনগণের নয়।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে বক-ধার্মিক। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে চুপ করে বসে থাকে। তারা উপরে গণতন্ত্রের কথা বললেও, ভেতরে একদলীয় শাসন চালায়। যা জনগণ বুঝে গেছে। কিন্তু জনগণ আর সুযোগ দেবে না।
এখন মানুষ আর ভোট দিতে যেতে চায় না। জনগণ ভুলে গেছে তারা কখন ভোট দিতে গিয়েছে। এবার জনগণ আর ভূতের মুখে রাম নাম শুনতে চায় না। জনগণ অনেকবার বেল তলায় গিয়েছে, এখন আর বেলতলায় যাবে না। এবার যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে চাইলে জনগণ তার কড়া জবাব দেবে।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভার, টানেল নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, আমাদের আপত্তি দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ১০ টাকায় আর চাল পায় না। আজ দেশের চাকরির বাজারে তরুণদের চাকরি নেই। তার মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয় শুনলে একদম চাকরি নেই। চাকরির পরিবর্তে মানুষের আজ গায়েবি মামলা জুটে। কিন্তু জনগণের কাছে এখন এসব মামলার কোন ভিত্তি নেই।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১৯ জুলাই চট্টগ্রামে বিএনপির পদযাত্রা প্রমাণ করবে সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। আজ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশের মানুষ প্রমাণ করছে, দেশের মানুষ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ দেশের জনগণ আর আওয়ামী লীগের রুটি-হালুয়ার ভাগ চায় না। দেশের মানুষের সাথে এক হয়েছে বিদেশিরা। বিদেশিরা শ্রীলঙ্কা যায়নি, ভারত যায়নি, নেপাল যায়নি। তারা বাংলাদেশে এসেছে। কারণ কি? কারণ বিদেশিরা বুঝতে পারছে, দেশে কোন গণতন্ত্র নেই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জনগণকে আর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করছে, মানুষ আর এ সরকারকে চায় না। ১৯ তারিখ পদযাত্রায় আবারো প্রমাণ করবে জনগণ।’
বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ত্যাগ করবো না।’
সমাবেশে ১৯ জুলাই বিকাল তিনটায় নগরীর বহদ্দারহাট থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এক পদযাত্রার ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জাতীয় শ্রমিক দল কেন্দ্রীয কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি ম্যামাচিংসহ প্রমুখ।