দুঃস্বপ্নে শুরু দিন শেষে স্বপ্নময় বিশ্ব রেকর্ড

মুশফিক–লিটনের বিশ্ব রেকর্ড।

সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »

শুরুতে বিপর্যয়। বাংলাদেশ দল খাদের কিনারে। মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস দুজন মাঠে। বাংলাদেশ তখন দিকহারা। ২৪ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ঘরের মাঠের দলটি ধুঁকছে। এমন সময়ে উইকেটে গিয়ে রাজত্ব কায়েম করলেন মুশফিক-লিটন। দলকে দিলেন স্বস্তি, ভাঙলেন ৬৩ বছরের পুরনো বিশ্ব রেকর্ডও।

২৫ বা এর চেয়ে কম রানে ৫ উইকেট জারিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিটি ৬৩ বছর আগের। যে জুটির সাক্ষী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তখন ছিল ডাক্কা স্টেডিয়ামে। ১৯৫৯ সালে এই স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান।

সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে পাকিস্তানের ওয়ালিস মাথিয়াস ও সুজাউদ্দিন গড়েন ৮৬ রানের জুটি। যা এতোদিন ধরে সর্বোচ্চ ছিল। দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার লড়াইয়ে বহু পুরনো সেই রেকর্ড ভেঙে টেস্ট ইতিহাসে নতুন পাতা যোগ করলেন মুশফিক ও লিটন।

এরপর আরও একটি রেকর্ড নিজেদের করে নেন মুশফিক ও লিটন। ষষ্ঠ উইকেটেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা। আগের সর্বোচ্চ রানের জুটিতেও ছিল মুশফিকের নাম। ২০০৭ সালে কলম্বোতে ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিক ১৯১ রান করেন। যা এতদিন সর্বোচ্চ রানের ছিল। সেই জুটি ছাড়িয়ে এখনও অবিচল মুশফিক-লিটন।

সকালে টস জিতেছিল বাংলাদেশই। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে স্বাভাবিকভাবে আগে ব্যাট করাকেই পছন্দ করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু সেই উইকেটে লঙ্কান দুই পেসারের দাপটে কোণঠাসা টাইগাররা। দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্ডোর সিম মুভমেন্টেই শেষ তামিম-মুমিনুল-সাকিবদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররা। পারেননি জয়-শান্তর মতো তরুণরাও।

তবে টাইগারদের আশার পালে হঠাৎ হাওয়া লাগান মুশফিক ও লিটন। বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন। কিন্তু ইতিহাস তাদের বিপক্ষে। এমন বাজে শুরুর পর দলটি যে এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে ২০ রানও করতে পারেনি। কিছু দিন আগে ডারবান টেস্টে ১৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইয়াসির আলি চৌধুরির ১০ রান। এর আগে ২০১৮ সালে অ‍্যান্টিগা টেস্টে ১৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে লিটনের জুটিতে এসেছিল ১৬ রান।

মুশফিক ও লিটন দায়িত্ব নিয়েই খেলতে থাকেন। বাজে বল কিংবা নিজের জোনে বল না পেলে মারতে যাননি কোনো বাউন্ডারি। এক-দুই রানে রাখেন সচল রাখেন রানের চাকা। তবে জুটি শতক তোলার একটু পরপরই সুযোগ দিয়েছিলেন লিটন। আসিথা ফার্নান্ডোর বলে হুক করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। ক্যাচ ধরতে গিয়ে বলের ফ্লাইট মিস করে সে সুযোগ হাতছাড়া করেন কুশল মেন্ডিস।

এই মেন্ডিসই প্রথম সেশনের ঠিক আগে বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ ওভারে যখন পেসার রাজিথা বল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ বুক ধরে বসে পড়েন। অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এমন কিছু ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে অনেকের ক্যারিয়ার। তবে আশার খবর প্রাথমিক শুশ্রূষার পরই ফিরে এসেছেন।

মেন্ডিস ফিরে আসায় লঙ্কানরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও মাঠে তাদের অস্বস্তি বাড়াতে থাকেন লিটন ও মুশফিক। দুইজনই ফিফটি ছুঁলেন। এরপর জুটির শতক। পার হয় দ্বিশতকও। একই সঙ্গে দুই জনের সেঞ্চুরি। অস্বস্তি ক্রমেই বাড়তে থাকে লঙ্কান শিবিরে। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ২৫৪ রানের জুটিতে দিন শেষ করেন এ দুই ব্যাটার। মুশফিক ১১৫ ও লিটন ১৩৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

দারুণ এ জুটিতে রেকর্ড বই থেকে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম সরিয়ে দেন লিটন। এর আগে এই মুশফিককে নিয়ে ২০০৭ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে ৭৮ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর ১৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন আশরাফুল। এতো দিন এটাই ছিল ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি।

দিনের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কাসুন রাজিথার ভেতরে ঢোকা বল আলসে ভঙিতে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। পরের ওভারে বিদায় নেন তামিম ইকবালও। ফার্নান্ডোর আউটস্যুয়িং ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে আউটসাইড এজড হয়ে তামিম ক্যাচ দেন পয়েন্টে।

রানখরায় থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকও হতাশ করেছেন। আসিথার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। আর রাজিথার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব আরেকটি ভেতরে ঢোকা বলে হয়ে যান এলবিডাব্লিউ। ফলে ২৪ রানে ৫ উইকেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ।