তাদের মুখে ছাই পড়েছে: শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। শুক্রবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

যুদ্ধের কারণে বতর্মান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে বলেছিল শ্রীলঙ্কা হবে, এই হবে, সেই হবে- তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশাআল্লাহ হবেও না।’

বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা টাকা দেশের জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি, অর্থনীতিকে গতিশীল করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।

‘তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় ছিল- দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার হাজার টাকা কামাই করে বিদেশে যেয়ে এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র। আমার কথা হল বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।’

নেতাকর্মীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। আমিও বিশ্বাস করি কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।

‘ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’

নেতাকর্মীদের স্লোগান আর করতালির মধ্যে এর আগে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ যুব মহাসমাবেশের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর এটাই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি উপস্থিত হলেন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর এ মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত হন বেলা আড়াইটার দিকে।

এর অনেক আগে সকাল ৯টা থেকেই যুব নেতাকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা রঙের টিশার্ট পরে, ক্যাপ মাথায়, প্ল্যাকার্ড হাতে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই সমাবেশস্থল ভরে ওঠে। ঐতিহাসিক এ প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে নেতাকর্মীরা আশেপাশে সমবেত হন।

কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীদের সামনে বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আমরা যখন সরকারে আসি বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাই। মাঝখানে আট বছর বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এরপর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি- এই ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ; এই বাংলাদেশকে এখন আর কেউ আন্তর্জাতিকভাবেও অবহেলার চোখে দেখে না। প্রত্যেকেই বলে আজকে বাংলাদেশ এত ঘাত প্রতিঘাত এত কিছুর পরেও আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশপ্রেম থাকলে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে এটা করা যায় আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের ‍তুলনামূলক চিত্র সমাবেশে তুলে ধরেন তিনি।

বিএনপি নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি যে বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলে, লুটপাটের কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে। এখানে আমি যুবলীগের নেতাকর্মীদের জানাতে চাই আজকে তারেক জিয়া তার শাস্তি হয়েছে মানিলন্ডারিংয়ের কেসে। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআই এর লোক এসে বাংলাদেশের সাক্ষী দিয়ে গেছে।

‘মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছর সাজা, ২০ কোটি টাকা জরিমানা আর গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি তার জন্য সে সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতাই হচ্ছে খুন মানিলন্ডারিং অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ মণির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনে প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী যুবলীগ।

৫০ বছর পর শেখ মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ এখন সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তীতে তিনি যুবলীগের সব নেতাকর্মীকে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে একযোগে কাজ করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুবলীগের জন্য আমার আহ্বান থাকবে আমি বলেছি তরুণের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। আজকে যুবকদের কি করতে হবে? দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে… আমাদেরকে দেশের সেবা করতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে।’

মহাসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল।