ঢাকার টেস্টে বাংলাদেশের বিশাল লিড

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

শেষ বলটি ছেড়ে দিয়ে আম্পায়ারের দিকে তাকালেন জাকির হাসান। তার ধারণাই ঠিক হলো, বেলস তুলে নিলেন আম্পায়ার। নন স্ট্রাইক থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত ততক্ষণে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা দিয়েছেন। জাকিরও এগিয়ে গিয়ে সঙ্গী হলেন তার। ‘ফিস্ট বাম্প’ করে পরস্পরকে যেন বলতে চাইলেন তারা ‘ওয়েল ডান।’ হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়েও তাদের চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠছিল স্পষ্ট। আফগানিস্তানের ড্রেসিং রুমের সামনে তখন পাথুরে মুখে দাঁড়িয়ে জোনাথন ট্রট। আফগানিস্তান কোচ হয়তো বুঝতে পারছিলেন বাস্তবতা, এই ম্যাচে তাদের ফেরার পথ আর নেই!

শেষ সেশনে জাকির ও শান্তর ব্যাটিং দেখে যে কারও মনে হতে পারে, ব্যাটিংটা এখানে কতই না সহজ। কে বলবে, আগের দুই সেশন ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল দুর্বিসহ! এই দুজনের জুটির আগে ৪৮ ওভারে উইকেট পড়েছে ১৬টি।

উইকেটের ওই স্রোতের পর জাকির-শান্ত জুটির রান প্রবাহে ম্যাচের সম্ভাব্য ভাগ্যও অনেকটা নির্ধারিত হয়ে গেছে এই দিনে। এমনিতে সাধারণ টেস্টের তৃতীয় দিনটিকে বলা হয় ‘মুভিং ডে।’ কিন্তু মিরপুরে দ্বিতীয় দিন শেষেই পরিণতি মোটামুট পরিষ্কার। এখনই জয় দেখছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের ম্যাচ বাঁচানো এখন অসম্ভবের কাছাকাছি। খবর বিডিনিউজের।

প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের লিডকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বাড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে তারা এখন এগিয়ে ৩৭০ রানে। উইকেট আছে এখনও ৯টি।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাবে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় স্রেফ ১৪৬ রানে। ফলো-অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দিন শেষ করে ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে।

জাকির ও শান্ত, দুজনের নামের পাশেই ঠিক ৬৪ বলে অপরাজিত ৫৪। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১১৬।

দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস দিয়ে। শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা স্রেফ ৯ রানের মধ্যে। ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে দিন শুরু করা দল এ দিন আর স্রেফ ৪৫ মিনিট খেলে যোগ করতে পারে কেবল ২০ রান।

প্রথম আফগান পেসার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেটের স্বাদ পান নিজাত মাসুদ।

আফগানদের বোলিংয়ের স্বস্তি উবে যেতে সময় খুব বেশি লাগেনি ব্যাটিংয়ে। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ নতুন বলে ভালো করতে পারেননি। তবে শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনের আগ্রাসী বোলিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় আফগান টপ অর্ডার।

উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে জোড়া শিকার ধরেন দুই পেসার। আফগানিস্তান ৫১ রানে হারায় ৪ উইকেট। এর মধ্যে ছিল আফগান ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শাহিদির উইকেটও।

বাংলাদেশের ফিল্ড প্লেসিংও তখন আক্রমণাত্মক। চার স্লিপের সঙ্গে এক গালি, শর্ট পয়েন্টে ফিল্ডার। উইকেটের সামনে আর স্কয়ার সীমানায় নেই ফিল্ডার। উইকেটের তাড়নায় কিছু আলগা বোলিংও করেন পেসাররা। এই সুযোগে দ্রুত কিছু রান তোলার অবকাশ পান নাসির জামাল ও আফসার জাজাই। ব্যাটের কানায় লেগে বেশ কিছু সুযোগও হাতছাড়া হয় একটুর জন্য।

তবে ৭৩ বলে ৬৫ রানের এই জুটি ভাঙার পর আবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে আফগান ব্যাটিং। ৩৫ রানে জামালকে ফেরান মিরাজ, ইবাদতের শর্ট বলে জাজাই থামেন ৩৬ রানে। এরপর অভিষিক্ত করিম জানাত এক পাশ আগলে রাখেন কিছুটা, আরেক প্রান্তে ছিল ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়ার পালা। শেষ তিন ব্যাটসম্যান রানের মুখই দেখেননি।
জানাতকে ২৩ রানে বিদায় করে আফগান ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ। ৩০ রানের মধ্যে তারা হারায় শেষ ৬ উইকেট।

৪ উইকেট নিয়ে অপেক্ষায় থাকা ইবাদত আর সুযোগ পাননি পঞ্চম শিকার ধরার।

২৪৬ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ ফলো-অন করায়নি অনুমিতভাবেই। ম্যাচের কেবল দ্বিতীয় দিন, বিস্তর সময় পড়ে আছে। এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে এমনকি ছোট রান তাড়ার ঝুঁকিও কোনো দলের নেওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ আবার নামে ব্যাটিংয়ে। ইনিংসের শুরুতেই ঘটনার ঘনঘটা।

প্রথম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পরপরই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান মাহমুদুল হাসান জয়। পরের ওভারে রান আউটের হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান জাকির হাসান। এই ওভারে জয়ের ব্যাট থেকে আসে আরও তিন বাউন্ডারি। তার বিদায় ঘণ্টাও বাজে একই ওভারেই।

ওভারের পঞ্চম বলটির পর হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান বোলার নিজাত মাসুদ। ওভার শেষ করতে এসে দারুণ ডেলিভারিতে জয়কে (১৩ বলে ১৭) বিদায় করেন আমির হাজমা হোতাক।

আফগানদের খুশির উপলক্ষ শেষ ওখানেই। প্রথম ইনিংসের মতোই শান্ত সাবলিল ব্যাটিংয়ে সরিয়ে দেন চাপ। ইয়ামিন আহমাদজাইকে চার মারেন পরপর দুই বলে। পরের ওভারে নিজাত মাসুদের ওভারে তিনটি চর মারেন জাকির। ওই ওভারেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শান্ত জীবন পান ৯ রানে।

তাতে তার ছন্দে তো বাধা পড়েনি। দাপুটে ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান দুই ব্যাটসম্যানরাও। আফগানরাও প্রথম ইনিংসের মতো আলগা বল করেন প্রচুর। জাকির ও শান্ত তা কাজে লাগান দারুণভাবেই।

৪৭ রান থেকে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন জাকির। অভিষেকে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় টেস্টে ফিফটির পর আরেকটি পঞ্চাশের দেখা পেলেন তিনি তৃতীয় টেস্টেও। শান্তও পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৭ থেকে বাউন্ডারি মেরেই।

দিনশেষে এক বিন্দুতে দুজনই। বাংলাদেশও ছুটছে জয়ের ঠিকানার দিকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ৩৮২ (আগের দিন ৩৬২/৫) (মুশফিক ৪৭, মিরাজ ৪৮, তাসকিন ২, তাইজুল ০, শরিফুল ৬, ইবাদত ০*; ইয়ামিন ১০-১-৩৯-২, মাসুদ ১৬-২-৭৯-৫, করিম ১১-৩-৩৩-০, জাহির ১৬-০-৯৮-১, হামজা ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)।
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৯ ওভারে ১৪৬ (ইব্রাহিম ৬, মালিক ১৭, রহমত ৯, শাহিদি ৯, জামাল ৩৫, জাজাই ৩৬, জানাত ২৩, হামজা ৬, আহমাদজাই ০, মাসুদ ০, জাহির ০*; তাসকিন ৭-০-৪৮-০, শরিফুল ৮-২-২৮-২, ইবাদত ১০-১-৪৭-৪, তাইজুল ৫-০-৭-২, মিরাজ ৯-১-১৫-২)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৩ ওভারে ১৩৪/১ (জয় ১৭, জাকির ৫৪*, শান্ত ৫৪*; আহমাদজাই ৫-০-৩৪-০, মাসুদ ৩.৫-০-৩০-০, হামজা ৬.১-০-২৭-১, জানাত ৪-০-২৪-০, জাহির ৪-০-১৯-০)।