ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় বৃষ্টির পানি বাড়িঘর ও আঙিনায় জমে থাকে এবং সেখানে ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশা জন্ম নেয়। কিন্তু এবার শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমেও ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
চট্টগ্রামে গেল বছর জুলাই থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এ বছর বেড়েছে জানুয়ারি থেকে। বলা যায়, এবার সারা বছরই রয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে মশা নিধনে তৎপর হওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন।
প্রচ- গরমের পর গত কয়েক দিনে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি বাসাবাড়ি, আঙিনাসহ নানা স্থানে জমে থাকার সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস যেমন তার স্বভাব পাল্টাচ্ছে, তেমনি পাল্টাচ্ছে এডিস মশাও। এর অন্যতম কারণ প্রায় সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণকাজের জন্য নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকা। ফলে এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে। বর্ষাকালে বিপদটা আরও বাড়তে পারে।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বহুতল (চারতলা বা তার চেয়ে বেশি) বাড়িতে, যার হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নির্মাণাধীন স্থাপনা (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সবচেয়ে কম এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিনতলা বা তার চেয়ে কম উচ্চতার বাড়িগুলোয় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বহুতল ভবনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
ডেঙ্গু রোধে দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রাক্-প্রতিরোধ ও উত্তর-প্রতিরোধ। প্রথমত, ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা বারান্দায় পানি জমে না থাকে। এ বিষয়ে নাগরিক ও সিটি করপোরেশন উভয়েরই দায়িত্ব আছে। নাগরিকদের মনে রাখতে হবে, একজনের অবহেলা অনেকের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো গণসচেতনতা তৈরি করবে, মশা মারার ওষুধ ছিটাবে, প্রয়োজনে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা নিধন করতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমাটবদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা হয়। তাই ঘরের আশপাশে পানি জমাটবদ্ধ অবস্থায় রাখা যাবে না। এডিস মশা ঘরের ভেতরেই থাকে। দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই এখন থেকে সকলকে সচেতন হতে হবে।
নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করলেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।