টিয়া পাখি

শেখ সজীব আহমেদ :

আহমাদের ইচ্ছে টিয়া পাখি পালবে। টিয়া পাখিটা মানুষের মতো কথা বলবে, সব সময় তার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। ঠিক যেন মীনা কার্টুনের টিয়া পাখিটার মতো। আহমাদ খুব চিন্তিত। টিয়া পাখি পাবে  কোথায়? তার বয়সও তেমন বেশি না, দশ-এগারো বছর হবে।

আহমাদ টিয়া পাখি ধরার সন্ধান পেল। পাশের গ্রামের এক হিন্দুবাড়ির দিকে একটি বিরাট উঁচু প্রাচীন মন্দির আছে। সেই  মন্দিরে ছোটো ছোটো গর্ত আছে। সেই গর্তগুলোতে থাকে টিয়া পাখি। কিছু কিছু গর্তে সাপও থাকে।

আহমাদ বন্ধুদের নিয়ে মন্দিরের দিকে যায়। মন্দিরের ওপরে ওঠাও সম্ভব নয়। তাহলে টিয়াপাখি ধরবে কী করে? তার বন্ধুরা মন্দিরের ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে-

কিন্তু উঠতে পারছে না, পিছলে পড়ে যায়। এই সময়ে এক হিন্দু ভদ্রলোক এসে ওদেরকে মন্দিরের ওপর উঠতে মানা করেন,

‘গর্তে হাত দিলে সাপে কামড় দিতে পারে। ক’দিন আগে একলোক ওপর থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙেছে।’ এই বলে

হিন্দু ভদ্রলোকটি সতর্ক করে দেন এবং তারা বাড়ির দিকে চলে আসে।

আহমাদের মন খারাপ। তাহলে কি টিয়াপাখি পালা হবে না?

আহমাদ টিয়া পাখি ধরার হাল ছাড়েনি।  সে একদিন একা একাই মন্দিরের দিকে যায়। বিসমিল্লাহ বলে উঠতে থাকে। দূর থেকে সেই লোকটিকে দেখে আহমাদ নিচে নেমে লুকিয়ে রইল।  লোকটি  চলে যাওয়ার পর আবার সে উঠতে চেষ্টা করে। বেশিদূর উঠতে পারল না। হাতের সামনে যে গর্তগুলো আছে,

সেগুলোর দিকে ভয়ে উঁকি মেরে-মেরে দেখতে থাকে। যদি সাপ থাকে কামড় তো দেবেই। ক’টি ডিম দেখতে পেল। ডিমগুলো হয়তো টিয়া পাখির। এর একটু উঁচুতে, এক গর্তে বড় একটি টিয়াপাখি ঢুকছে দেখতে পায়। সে আরও একটু উঁচুতে উঠতে থাকে। ওপরে উঠতে উঠতে টিয়াপাখিটা গর্ত থেকে বাইরে চলে আসে। তারপর অপর একটি গর্তে সাপ দেখতে পেল। হাত-পা কাঁপতে থাকে। এ সময় ওই লোকটি তাকে দেখে ধমকে নামালেন এবং এই দিকে না আসতে বললেন। তারপর সে বাড়িতে চলে যায়।

আহমাদ রাতে ঘুমে স্বপ্ন দেখে, মন্দিরের ওপরে ওঠে টিয়া পাখি ধরে নিয়ে এসে যতœ করে লালন-পালন করছে এবং টিয়া পাখিকে ভাষা  শেখাচ্ছে। মীনা কার্টুনের টিয়া পাখিটার মতো ওটা কথাও শিখে ফেলছে। তার সঙ্গে সঙ্গেই টিয়া পাখিটা থাকে।

আহমাদের সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হলো। কিন্তু মন্দিরের দিকে যেতে দেরি হলো না। কত টিয়া পাখি ওড়াউড়ি করছে, তা দেখে  সে অবাক! টিয়াপাখি ধরার কৌশলটা খুঁজে পাচ্ছে না। সে টিয়া পাখির দিকে ঢিল মারতে থাকে। টিয়া পাখির গায়ে ঢিল লাগছে না। একটি ঢিল ওই ভদ্রলোকের মাথায় গিয়ে লাগলে তিনি বেশ ক্ষেপে গেলেন। আহমাদ একপাশে লুকিয়ে গেল। লোকটি বলছে, ঢিলটি কে মারলো রে?’ কিন্তু তিনি কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

এর ক’দিন পর বিকেলের দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ঝড়-তুফান আসবে হয়তো। আহমাদ ভাবে, হয়ত ঝড়-তুফানে টিয়াপাখি ওপর থেকে নিচে পড়তে পারে। মন্দিরের দিকে গেল সে। গতিবেগে বাতাস আসছে। মন্দিরের ওপর থেকে টিয়া পাখির ক’টি বাচ্চা মাটিতে পড়ে। বাচ্চাগুলো নিয়ে চলে এলো সে। বাচ্চাগুলো পালতে থাকে। বাচ্চাগুলোর জন্য সুন্দর খাঁচাও কিনলো। টিয়া পাখির বাচ্চাগুলো বেশ বড় হয়েছে। মানুষের মতো কিছু কথাও শিখেছে। একরাতে কে যেন  টিয়া পাখিগুলো চুরি করে নিয়ে গেল। আহমাদ কাঁদতে থাকে। মা-বাবায় সান্ত¡না দিতে লাগলেন এবং আশা দিলেন ঠিক মতো পড়াশোনা করলে মেলা থেকে  টিয়াপাখি কিনে দেবে।