টিকায় আশার আলো

টিকা নেওয়া কোভিডরোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি কম

সুপ্রভাত ডেস্ক »
টিকা নেওয়ার পরও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের শারীরিক জটিলতা এবং ঝুঁকির মাত্রা কম থাকে বলে জানা যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায়; এবার বাংলাদেশেও এক সমীক্ষায় একই ধরনের ফল মিলেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর বলছে, করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুঝুঁকি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় কম দেখা গেছে। খবর বিডিনিউজের।
সে কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন আইইডিসিআরের গবেষকরা।
গত মে ও জুন মাসে দেশে যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জাতীয় তালিকা থেকে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৩৪ জনকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তাদের সবার বয়স ছিল ৩০ বছরের বেশি।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৯২ জন কোনো টিকা নেননি। বাকি ৭৪২ জন অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অর্থাৎ, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন এমন ৩০৬ জন টিকা নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের রোগের গতিবিধি পর্যালোচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়।
আইইডিসিআর বলছে, টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ। আর দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ছিল ৪ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে যারা আগে থেকে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা) ভুগছিলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে আইইডিসিআর।
এ ধরনের রোগীদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতায় ভোগার হার দেখা গেছে পূর্ণ টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৭ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। আর যারা টিকা নেননি, তাদের ২৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। আর যে কোভিড রোগীরা আগে থেকেই বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন, তাদের মধ্যে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের ১০ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অথচ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার ৩২ শতাংশ।
একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত টিকা নেওয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের চেয়ে ১৬ শতাংশ পয়েন্ট বেশি ছিল।
আইইডিসিআর বলছে, টিকা গ্রহণকারীরা আক্রান্ত হলেও তাদের আইসিইউতে কম নিতে হয়েছে এবং মৃত্যুও কম হয়েছে বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোভিড রোগীদের মধ্যে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের ১৯ জনকে আইসিইউতে নিতে হয়েছে, যা ৩ শতাংশ। আর দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৩ জনকে আইসিইউতে যেতে হয়েছে, যা ১ শতাংশের কম।
করোনাভাইরাসের টিকা নেননি এমন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ শতাংশ বা ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে টিকা নিয়েছেন এমন ১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
টিকা নেওয়া ৯৮ শতাংশের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি
করোনার টিকা নেওয়া ৯৮ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকা নেওয়া ২০৯ জন টিকা গ্রহণকারীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এ ফলাফল আসে।
ফলাফলে জানানো হয়, টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বাকি দুই শতাংশের মধ্যে যাদের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি, তারা জটিল রোগে আক্রান্ত, অনেক বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম।
গতকাল সোমবার ‘হিমাটোলজিক্যাল প্যারামিটার্স অ্যান্ড অ্যান্টিবডি টাইটার আফটার ভ্যাকসিনেশন অ্যাগেইনস্ট সার্স কোভ-২’ শীর্ষক গবেষণার এ ফলাফল জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
টিকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি একেবারেই কম। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
দেশেই টিকা উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আজকের এই গবেষণা থেকে বাংলাদেশে জনগণের ওপর টিকা প্রয়োগের পর কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পরিবর্তন এবং পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য টিকার অ্যান্টিবডি তৈরির কার্যক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য আরও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেই সঙ্গে প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন থেকে চার মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিলে কী পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় সেই বিষয়েও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তবে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকা নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাবে এবং করোনায় আক্রান্ত হলে রোগের জটিলতা কমাবে এবং রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি কমাবে।
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত টিকা নেওয়াদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ এবং অর্ধেকের বেশী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশের আগে করোনাতে সংক্রমিত হবার ইতিহাস রয়েছে।
সেই সঙ্গে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এ ধরনের রোগের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকা গ্রহণের পর অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি।
আর অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৪২ শতাংশের টিকা নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সামান্য জ্বরসহ মৃদু উপসর্গের কথা জানিয়েছেন। রক্ত জমাট বাঁধা বা এরকম অন্য কোনও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়নি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঙ্গে অ্যান্টিবডির কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।