জাতীয় গ্রিডে যুক্ত ফেনীর চরের সৌরবিদ্যুত

একই এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও তিনটি প্রকল্প। যার অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর ও জাপান

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রামের কাপ্তাই ও সরিষাবাড়ির পর রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ চরে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের একটি অংশের কাজ শেষে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

একই এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে যার অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর ও জাপান।

প্রথম ধাপে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলের চর অঞ্চলে ২০২১ সালে শুরু হয় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণের কাজ। উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের এক হাজার একর জমিতে গড়ে উঠা দেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পটিতে প্রথম ধাপে অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক।

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান ‘ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইজিসিবি)’ মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে পাওয়ার সেলের তত্ত্বাবধানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রথম ধাপে ২৮৫ একর জমিতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ থেকে ৬২১ কোটি টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘টিনা সোলার’ কাজ করছে। ইতোমধ্যে এক লাখ ৭৮ হাজার প্যানেলে সোলার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

কর্মকর্তাদের অফিস ও আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। সমুদ্র উপকূলের জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের গতিবেগের ১০০ বছরের সমীক্ষা বিবেচনায় গোটা প্রকল্প এলাকায় লবণাক্ত পানি রোধে পাঁচ মিটার উচ্চতার আট কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হয়। গড়ে দৈনিক ৭৩ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। মিরসরাই বেজা গ্রিড সাব স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ।

ভবিষ্যতে প্রকল্পের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি প্যানেলগুলোর নিচের অংশে ও কৃত্রিম খালে শাকসবজি উৎপাদন করা হতে পারে; যা কৃষিতেও অবদান রাখবে বলে মনে করছেন প্রকল্প কর্মকর্তরা। অথচ এক সময় এ চরে কিছুই ছিল না। নোনা পানি আসায় ফসলও তেমনটা হত না।

৭৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর আরও ১০০ মেগাওয়াট করে তিনটি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে; যার অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর ও জাপান।

২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর  সরকারি সংস্থা ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) ও জাপানের মারুবেনি করপোরেশন ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুসারে দুই কোম্পানির অংশীদারত্বে গঠিত হবে ফেনী সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এতে দুই কোম্পানি সমান বিনিয়োগ করবে। ২০২৬ সালের জুনে এই কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হতে পারে।

একই এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও দুইটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে ইজিসিবি।