ছোট ভাইকে কবরে শুইয়ে এসে বড় ভাইয়েরও মৃত্যু

মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা

সুপ্রভাত ডেস্ক L:

আগের দিন রাতে মারা যাওয়া ছোট ভাইয়ের জানাজা-দাফনের কয়েক ঘণ্টা পরই মারা গেলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রশিদ। সোমবার রাতে নগরীর আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে তার জানাজা শেষে নগর বাইশ মহল্লা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সেই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বিকাল পৌনে ৫টায় মারা যান রহমানের ভাই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রশিদ। প্রয়াত দুই ভাই নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘পরিচ্ছন্ন ও নির্মাহ’ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাদের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বিডিনিউজকে বলেন, রশিদ ভাই মাস খানেক ধরে অসুস্থ ছিলেন। উনার হৃদরোগ ছিল। আজ সকালেই উনার ছেলেকে ফোন করি। তখন উনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি ফোনে কথা বলেননি। আমরা সবাই আবদুর রহমান ভাইয়ের জানাজা ও দাফনে ছিলাম। সেখান থেকে ফেরার ঘণ্টাখানেক পর শুনি রশিদ ভাই মারা গেছেন।

নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চন্দন ধর বলেন, উনারা পিঠাপিঠি ভাই ছিলেন। ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়ত তিনি মেনে নিতে পারেননি। রশিদ আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এম এ রশিদ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন।

আলকরণের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিটন কুমার শীল বলেন, গতরাতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অসুস্থ থাকায় এম এ রশিদ ভাইয়ের জানাজায় যেতে পারেননি। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তিনিও দোভাষ কলোনির নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চট্টগ্রামের আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের জানাজায় ছিলেন দলের নগর নেতারা।চট্টগ্রামের আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের জানাজায় ছিলেন দলের নগর নেতারা।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এক শোক বার্তায় বলেন, এম এ রশিদ ও আবদুর রহমানের মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। উনারা ছিলেন আপাদমস্তক নির্মাহ রাজনীতিবিদ। রাজনীতিকে কখনও অর্থবিত্তের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি। এম এ রশিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক শোক বার্তায় বলেন, এম এ রশিদ একজন সুদক্ষ সংগঠক হিসেবে দলের দুঃসময়ে কর্মীদের সংগঠিত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। উনার মৃত্যুতে আওয়ামী পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ একজন দক্ষ ও পরীক্ষিত নেতাকে হারালো। পৃথক শোক বার্তায় নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে উনাদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তাদের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। দলের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে তারা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী শোক জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় এম এ রশিদ ও আবদুর রহমান সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। এমন মৃত্যু বেদনাদায়ক। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে পুরাতন রেলস্টেশনে অনুষ্ঠিত আবদুর রহমানের জানাজায় দলীয় নেতাকর্মীরাসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। এসময় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য বখতেয়ার উদ্দিন খান, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।