ছাড়পত্র নিয়েছে ১০০টি

smart

নগরীতে বহুতল ভবন প্রায় তিন হাজার
পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে ভবন মালিকদের চিঠি দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর

ভূঁইয়া নজরুল »
নগরীতে সুদৃশ্য অনেক বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে এসব ভবনের অনুমোদনও রয়েছে। তবে, বহুতল ভবনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার বিধানটি অনেক পুরনো হলেও এতোদিন চলছিলো ঢিমেতালে। এখন সেই ছাড়পত্র নিশ্চিত করতে চিঠি যাচ্ছে ভবন মালিকদের কাছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে চিঠি ইস্যুর প্রক্রিয়া, একইসাথে হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং ওয়েল্ডিং কারখানাগুলোকেও নজরদারির আওতায় আনতে চিঠি দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চিঠি ইস্যুর বিষয়টি স্বীকার করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৭ অনুসারে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কিন্তু নগরীতে একসময় বহুতল ভবনের সংখ্যা কম থাকলেও এখন সেই সংখ্যা বহু। অনেক ভবনেরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। আমরা এখন এসব বহুতল ভবনগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে চিঠি ইস্যু করছি।’
কী পরিমাণ ভবনের ছাড়পত্র রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় ১০০ বহুতল ভবনের ছাড়পত্র রয়েছে, বাকি ভবনগুলোর ছাড়পত্র নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মূলত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে আমরা চিঠি দিয়েছি তাদের ভবনগুলোর পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে।’
নগরীতে কী পরিমাণ বহুতল ভবন রয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী বলেন, ‘ছয় তলার অধিক উচ্চতার ভবনগুলো বহুতল ভবন হিসেবে বিবেচিত। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে প্রায় তিন হাজার বহুতল ভবন রয়েছে।’
বহুতল ভবন অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্রের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবন অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা শুধু সিভিল এভিয়েশনের অনাপত্তির বিষয়টি বিবেচনা করি। অন্য কোনো সংস্থার ছাড়পত্র বিবেচনায় আনা হয় না। তবে আমাদের কাছ থেকে অনুমোদনের পর পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে ১০ তলার বেশি এবং ঢাকার বাইরে ৬ তলার অধিক উচ্চতার ভবনগুলোকে বহুতল ভবন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব ভবনের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। সিডিএ বা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা থেকে অনুমোদনের পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভবন নির্মাণের সময় বিনিয়োগের ভিত্তিতে একটি ফি পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দিয়ে ছাড়পত্র নিতে হয়। প্রথমবার ছাড়পত্র নেয়ার পর পরবর্তী বছর থেকে চারভাগের একভাগ ফি জমা দিয়ে নবায়ন করতে হয়।’
পরিবেশের ছাড়পত্রের বিষয়টিকে ইতিবাচক মন্তব্য করে সানমার প্রপার্টিজের পরিচালক (অপারেশন) মাহফুজুল ইসলাম বারী বলেন, ‘একসময় পরিবেশ ইস্যু নিয়ে সচেতনতা কম ছিল। তবে এখন সচেতনতা অনেক বেড়েছে, তাই আমরাও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে থাকি। এতে সরকারেরও একটি নজরদারি থাকলো।’
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ফি যথাযথভাবে জমা দেয়ার পরও ছাড়পত্র প্রদানে বিলম্ব করে জানিয়ে এপিক প্রপার্টিজের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ফি দিয়েও যথাসময়ে ছাড়পত্র পাই না। তাই ছাড়পত্র প্রদানে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো তৎপর হতে হবে।’
এদিকে পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কোনো ভবন নির্মাণে এক থেকে পাঁচ কোটির মধ্যে খরচ হলে পরিবেশগত ছাড়পত্র ফি ২০ হাজার টাকা, পাঁচ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ৪০ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। পরবর্তী বছর থেকে চার ভাগের একভাগ টাকা জমা দিতে হবে। তবে বহুতল ভবনের পাশাপাশি নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং ওয়েল্ডিং কারখানাগুলোকেও চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী। তিনি বলেন, ‘এতে সরকারের রাজস্ব আদায় যেমন বাড়বে তেমনিভাবে নজরদারিও বাড়বে।’
পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয় তা জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত চওড়া রাস্তার পাশে নির্ধারিত উচ্চতার ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে কি-না, ভবনের লে-আউট যাচাই করা, ভবনটি কোন স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছে, ভবনের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা খালি রেখে গড়ে তোলা হচ্ছে কি-না এমন অনেক বিষয় বিবেচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে দিন দিন বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক স্থানে পুরনো ভবন ভেঙ্গে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এসব ভবন পরিবেশসম্মতভাবে করা না হলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা হতে পারে।

ক্যাপশন-

পাহাড়চূড়ায় গড়ে তোলা এপিক প্রপার্টিজের বহুতল ভবন- রনী দে