চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ জন

ভূঁইয়া নজরুল :
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার গ্রিন জোনে (করোনা উপসর্গ) প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন রোগী মারা যাচ্ছে। এই হারটা অনেক বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে রেড জোনে (করোনা পজিটিভ) মৃত্যুর হার কম।’ প্রাপ্ত তথ্যমতে গত সোমবার একদিনে চমেক হাসপাতালে মারা গিয়েছিল ১৯ এবং জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে মারা গিয়েছিল আরো চার জন। বুধবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনায় মারা যান একজন ডাক্তার এবং উপসর্গ নিয়ে আরো আটজন এবং জেনারেল হাসপাতালে উপসর্গে মারা যায় চার জন।
হঠাৎ এতো মৃত্যু কেন? এই প্রশ্নের জবাবে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, রেড জোনের তুলনায় গ্রিন জোনে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এর কারণ গ্রিন জোনের রোগীরা শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এখানে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী হওয়ায় তারা সঠিক ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে না। এক জায়গায় বিভিন্ন রোগের ট্রিটমেন্ট করা যাচ্ছে না। এর সাথে রয়েছে অক্সিজের স্বল্পতা।
তিনি আরো বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীরা করোনা ওয়ার্ডে থাকায় তারা অক্সিজেন পাচ্ছে। তাই সেখানে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন। তই আমরা গ্রিন ওয়ার্ডেও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কাজ করছি।
রোগী মৃত্যুর এই হার জেনারেল হাসপাতালেও বেশি। প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল বুুধবার সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে দীলিপ দত্ত নামে একজন মারা যাওয়ার পর বিকেলে সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ সারোয়ার উদ্দিন আহমেদ মারা গেলেন। এদের কেউ করোনা শনাক্ত নয়, তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এতো অধিক হারে মৃত্যু প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী সম্প্রতি সুপ্রভাতকে বলেছিলেন, জুন মাসে করোনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। তাই এসময়ে মৃত্যুর হার ও সংক্রমণ বাড়বে।
এই মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন,‘করোনা মহামারিতে ৫ শতাংশ রোগী থাকে মুমুর্ষ। এই মুমুর্ষ রোগীদের জন্য হাইফ্লো অক্সিজেন। কিন্তু সিলিন্ডারে সেই চাপ থাকে না। তাই সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাইফ্লো নসল কেনোলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলে চাপ বেশি থাকে।‘
কিন্তু সব হাসপাতালেও তো এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই। এবিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা এখন গ্রিন জোনে (উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া) এবং রেড জোনে (করোনা শনাক্ত রোগী) সেন্ট্রাল অক্সিজেনের মাধ্যমে সরবরাহের জন্য পাইপ লাগাচ্ছি। তা সম্পন্ন হলে আগামী সপ্তাহের দিকে হয়তো কিছু ভাল রেসপন্স পাওয়া যেতে পারে।’
করোনায় প্রধান চিকিৎসা অক্সিজেন জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন,‘ ধারণক্ষমতার বেশি রোগী থাকলে অক্সিজেন কিভাবে পাওয়া যাবে। একটি সিলিন্ডার থেকে কয়জনকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে? যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আগামীতে রোগীরা হাসপাতালের শয্যা তো দূরের কথা ফ্লোরেও স্পেস পাবে না। উন্নত দেশগুলোর অবস্থাও এই করোনা মোকাবেলায় শোচনীয়। সেখানে আমাদের অবস্থা কি হবে তা অনুমেয়।’
রোগীদের মৃত্যুর বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, ‘আমরা এপর্যন্ত অনেক রোগীকে সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে পাঠিয়েছি। কিন্তু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা যাদের ছিল তাদের মৃত্যু হার বেশি।‘ এদিকে যারা মারা যাচ্ছে তাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এধরনের রোগীরা বেশি মারা পড়ছে। গতকাল বুধবার মারা যাওয়া মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাডক ডা. এহসান ছিলেন লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত, সিডিএ’র টাউন প্ল্যানার সারোয়ার উদ্দিন আহমেদ ছিলেন হার্টের রোগী, এর আগে গত সোমবার মারা যাওয়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী ছিলেন অ্যাজমা রোগী, শিল্পগ্রুপ এসআলমের পরিচালক মোরশেদুল আলম ছিলেন হার্টের রোগী, এভাবে মারা যাওয়া বেশিরভাগ রোগী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত এসংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৯ জন এবং করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গিয়েছে ৮৩ জন। কিন্তু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেডসহ চট্টগ্রামে চার হাসপাতালে (চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-১০০, জেনারেল হাসপাতাল-১১০, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি-৩০ ও ফিল্ড হাসপাতাল-৫০) ২৯০টি শয্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১০০ শয্যার হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য চালু হলেও তা এখনো পুরোদমে সচল হতে পারেনি। বেসরকারি দুই হাসপাতাল ইম্পেরিয়াল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এগুলো এখনো চালু হয়নি। ১০০ শয্যার রেলওয়ে হাসপাতাল সম্প্রতি চালু হয়েছে শুধুমাত্র আইসোলেসনের জন্য।