চমেকে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে শিথিলতা কেন

২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিটি স্ক্যান সেবা শুরু হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই সেবা অব্যাহত থাকার পর ওই বছরের আগস্ট মাসে মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর ৪ বছর সিটি স্ক্যান করা বন্ধই থাকে হাসপাতালে। ২০১৮ সালে নতুন একটি সিটি স্ক্যানিং মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের দিকে নতুন মেশিনের সেবা চালু হয়।
২০২৩ সাল পর্যন্ত এটা চালু ছিল। মাঝে কয়েকবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলেও তা মেরামত করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ জুন মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৩ জুন মেশিনটি সচল হয়। কিন্ত কয়েক দিন না যেতেই ৪ আগস্ট তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টানা ২ মাস চালু থাকার পর ৩০ সেপ্টেম্বর সচল হয়। কিন্ত এবার এক মাস না যেতেই ২৪ অক্টোবর থেকে ফের সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে এবার মেশিনটির ‘আর্থিং ক্যাবল’ চুরি যাওয়ায় টিউব নষ্ট হতে পারে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। এ নিয়ে চলতি বছরে তৃতীয়বারের মতো বন্ধ হলো সিটি স্ক্যান সেবা।
‘আর্থিং ক্যাবল’ চুরির বিষয়টি সুপ্রভাত প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করেছেন সিটি স্ক্যান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী। তিনি বলেন, কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সচল করা হয় সিটি স্ক্যান। কিন্তু এক মাস না যেতেই খবর এলো সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি থেকে প্রকৌশলী পাঠিয়ে দিই। তবে এবারো টিউবে সমস্যা হয়। কি জন্য টিউব নষ্ট হয়ে যায়, তার কারণ খুঁজতে থাকে প্রকৌশলীরা। পরে জানা যায় সিটি স্ক্যানের পাওয়ার ‘আর্থিং ক্যাবল’ চুরি হয়েছে। যেটা প্রায় দেড়শো ফুট মাটি খুঁড়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। এ ক্যাবল সিটি স্ক্যানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলো।
বর্তমানে অনেক ধরনের রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান টেস্টের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই টেস্ট করাতে খরচ বেশি। সাধারণত সরকারি হাসপাতালে মানুষ যায় কম খরচে চিকিৎসার জন্য। এখন সেখানে যদি সিটি স্ক্যানের মতো ব্যয়বহুল টেস্টটি বাইরে থেকে করাতে হয় তাহলে তা সাধারণ ও নিম্নবিত্তদের জন্য ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’ হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই মেশিনটির দ্রুত মেরামত দরকার।
সুপ্রভাত প্রতিবেদনে বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণে যত্ন ও আন্তরিকতার অভাব আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তাদের অনেকের মধ্যে ‘সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল’ ধরনের মনোভাব কাজ করে। এই ধারণা পরিহার করতে হবে। ভাবতে হবে সরকারি প্রত্যেকটি জিনিসের মালিক জনগণ। আর সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করা মানে নিজের সম্পত্তি নিজেই বিনষ্ট করা।