চট্টগ্রাম মহানগরের ফুটপাত দখলমুক্ত হবে কবে

ফুটপাত তৈরি করা হয় পথচারীদের চলাচলের সুবিধার লক্ষ্যে। কিন্তু সেই ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘেœ কখন পথচারীরা হাঁটতে পেরেছিল তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। বর্তমান চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য সময় ও পোশাক নির্দিষ্ট করে দিলেও কোনো এলাকার হকারই তা মানছেন না।
অবশ্য তাঁর আগের নির্বাচিত মেয়ররাও তাঁদের মেয়াদকালে একাধিকবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেও সফল হতে পারেননি। কয়েকদিন বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে চললেও পরে পুরনো অবস্থায় ফিরে যায় হকাররা।
আসলে পুরো নগরই এখন বাজারে পরিণত হয়েছে। জুতাÑ স্যান্ডেল থেকে শুরু করে মানুষের প্রয়োজনীয় এমন কোনো দ্রব্য নেই যা ফুটপাতে মিলছে না। চালÑডাল, মাছÑমাংস, মুরগি, খাসি, কাপড়চোপড়, প্রসাধনী সবকিছুই মিলছে ফুটপাতে। নগরের কিছু কিছু এলাকার সড়ক ও ফুটপাত দেখে বোঝার উপায় নেই স্থানটি কোনো সড়কের অংশ নাকি কাঁচাবাজারের।
ফুটপাতে দোকানপাট শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশে বসে তা কিন্তু নয়। বিশ্বের প্রতিটি নগরীতেই ফুটপাতে দোকান বসে। বহু দেশের ফুটপাতের খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এবং সে সঙ্গে তা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মতও। সে সব দেশের ফুটপাতের দোকানগুলি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার কারণ সেখানে মল বা মার্কেটের চেয়ে কম দামে জিনিস কেনা যায়। কাজেই বাংলাদেশ বা চট্টগ্রামের ফুটপাতে দোকান থাকবে, সেখানে বেচাকেনা হবে তাতে কারো আপত্তি নেই। আপত্তি হচ্ছে যখন দেখা যায় সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি ও লোক চলাচল বন্ধ করে শুধু বেচা বিক্রি হচ্ছে আর নগরবাসীকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। যেসব দেশে ফুটপাতেও বেচাকেনা হয় সেসব দেশে তা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে, কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময় ধরে বেচাকেনা করতে পারে হকাররা। এতে ক্রেতাÑবিক্রেতা দুপক্ষই লাভবান হয় কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেচা ও কেনা করতে হয় বলে দুপক্ষই দরদামে সময় নষ্ট করে না। অন্যদিকে তা যান চলাচল ও পথচারীদের চলাচলেও বিঘœ সৃষ্টি করে না।
বাংলাদেশে বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও হকারদের নিয়মের মধ্যে আনা যাচ্ছে না কেন? উত্তরটা খুবই সোজা। আর তা হলো হকারদের নিয়মের মধ্যে আনতে যে দু পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে গলদটা রয়ে যাচ্ছে সেখানে। অর্থাৎ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পুলিশ বাহিনীর আন্তরিকতার অভাবই এই পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ।
এই ফুটপাত বাণিজ্য থেকে প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের কাছেই পৌঁছায়। ফলে এদের আশির্বাদ ও মদদে হকাররা ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকানদারি করে।
কাজেই ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে হলে প্রয়োজন এই দু পক্ষকে আন্তরিক ও সৎ হওয়া। নতুবা মেয়র হোক, প্রশাসক হোক কিংবা পুলিশের কমিশনারই হোক কারুর পক্ষে ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে না।