ঘাটতি নেই তবুও দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

‘আমদানিকারকদের কারসাজিতে দর বৃদ্ধি’

আজ থেকে ৩০ টাকা দরে টিসিবির ট্রাকে মিলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক »
হঠাৎ করে আবারো বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। দুইদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও পেঁয়াজের এই বাড়তি দামে বিপাকে ভোক্তারা।
তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানিকারকদের কারসাজিতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বেশকিছু বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির চিত্র ফুটে ওঠে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের প্রতিবেদনে দাম বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
দুইদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারকদের কারসাজি বলে মনে করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জামান। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, মংলা, বেনাপোল, সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়। আমদানিকারকরা ভারত থেকে আমদানি পেঁয়াজ ট্রাকেই রেখে দিয়ে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তাদের কারসাজিতেই পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাল থেকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারবে না।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। এছাড়া ভারত বা বাংলাদেশ কোনো পক্ষই পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানিকারকরাও বলছেন, পেঁয়াজের আমদানির গতি কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি। ভারতে বৃষ্টির কারণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় গতি কমেছে।
অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। অন্যদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানেন না।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, ‘আমারও জানা নেই কেন দাম বাড়ছে। তবে বাজারে দাম বেড়েছে এটা ঠিক।’ এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও পেঁয়াজের ঘাটতি নেই।
এক মাস আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪৯.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের এই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ মজুত রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ তাদের। এই সময় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান ক্রেতারা।
টিসিবির উদ্যোগে পেঁয়াজ বিক্রি
আজ থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে সেলের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে ৩০ টাকায়।
টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান জামাল উদ্দীন সুপ্রভাতকে বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে নিত্যপণ্যের সাথে ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জামান মনে করেন, টিসিবির ট্রাক সেলের মাধ্যমে ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে। পেঁয়াজ দাম কমবে বলে আশা করেন।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ৪৭৬ টন তুরস্কের পেঁয়াজ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আরো ১ হাজার ৬৫২ টন তুরস্কের পেঁয়াজ টিসিবির জন্য আসবে। আগামী ৭ অক্টোবর পেঁয়াজের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ পচে যায়। তাই প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ ১১ হাজার টন। চাহিদার বাকি ঘাটতি মেটাতেই আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৯ হাজার টন।