গরিব ও শ্রমজীবীদের সুরক্ষা দিন : জীবনের প্রয়োজনে লকডাউন মেনে চলতে হবে

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় গতকাল থেকে ৭ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে, সমাবেশ স্থগিত, হোটেল রেঁস্তোরা, কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে হোটেল রেঁস্তোরায় বসে খাওয়া যাবেনা। মার্কেট, শপিংমল ও অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকবে। শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, সরকারিÑ বেসরকারি অফিস সীমিত আকারে, ব্যাংক ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে। ওষুধের দোকান স্বাভাবিক নিয়মে খোলা থাকে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারবেনা। জরুরি সেবাসমূহ খোলা থাকবে। সারা দেশে এই লকডাউন ১ সপ্তাহের জন্য কার্যকর থাকবে তবে অনুমিত হচ্ছে এই লকডাউনের সময়সীমা বাড়তে পারে।
লকডাউনে অফিস, শিল্পকারখানা, ব্যাংক খোলা থাকবে কিন্তু পরিবহন না থাকায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, রিকশা চলাচল করবে। এই সুযোগে তারা বাড়তি ভাড়া হাঁকাবে। লকডাউনের এই সময়ে গরিব মানুষের আয় রোজগার, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ যেমন সিএনজি চালক, হকার, ফুটপাত ব্যবসায়ী, দিনমজুর, বাস-ট্রাকের হেলপার-চালক, হোটেল রেঁস্তোরার কর্মচারী, দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ীরা অনিশ্চিত জীবনে পড়বেন। যে শ্রমজীবীরা দিন আনে দিন খায় তাদের কি অবস্থা হবে। আবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় অনেকে কাজ হারাবেন, বেতন, মজুরি কমে যাবে-তাই দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের সুরক্ষায় সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবতে হবে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে যেভাবে সরকার, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বিত্তবান মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন মানুষদের রক্ষায়, এবারও অনুরূপভাবে মানবিক কর্মযজ্ঞের শামিল হওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেরি করা উচিত হবে না।
আমাদের অর্থনীতির ৩টি বড় খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা। অর্থনীতি ও জীবনের প্রয়োজনে জীবিকা অব্যাহত রাখতে হবে সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেই। কোনোভাবেই কৃষি ও কৃষি সহায়ক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া চলবেনা। গ্রামের কৃষক, চাষি দিনমজুর ও অসহায় মানুষদের সকল প্রকার সাহায্য দিতে হবে। কৃষিপণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প কারখানা খোলা থাকবে বলা হয়েছে। এজন্য শ্রমিকÑকর্মচারীদের যাতায়াত ও বিশেষ ভাতা দেওয়া উচিত, বিশেষত পোশাক শিল্পে। তাদের দুপুরে ১ বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ থেকে করা উচিত। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও দেখতে হবে। ছোট ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়বেন। রমজানে অনেক ব্যবসায়ী আগেই পণ্য কিনে রেখেছেন, এখন দোকান পাট, মার্কেট বন্ধ থাকায় তাদের জীবনÑজীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের গতবার যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিলো, তা পুরোপুরি বণ্টন করা যায়নি। দেশের কর্মজীবীদের বড়ো অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে, তাদের কথা ভাবতে হবে।
লকডাউনের ঘোষণা শুনে মানুষ যেভাবে গ্রামে যেতেও পণ্য কিনতে অস্থির হয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করবে। অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুত করা উচিত নয়, এতে বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়। কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্যের বাজার খোলা রয়েছে সুতরাং দিশেহারা হওয়া উচিত নয়, সরকার থেকে নিত্যপণ্যের মজুদ স্বাভাবিক রয়েছে মর্মে বলা হয়েছে। রমজানে যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে এবং পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে সরকারকে তা নিশ্চিতে বাজার মনিটরিং করতে হবে।
করোনার চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। উপজেলায় চিকিৎসাসেবা বাড়াতে পারলে নগরের হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ বাড়বেনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জীবনটা বড়, জীবন আগে’ তাই সকলকে লকডাউনের সময় বিধিবিধান পালন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। সুস্থির ভাবে, শৃঙ্খলা মেনে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার ও জনগণকে একাত্ম হতে হবে। লকডাউনে যারা অসহায় হয়ে পড়েছেন, যাদের জীবিকা নেই, যে সব ছোট ব্যবসায়ী বিপাকে আছেন। সরকারকে তাদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।