ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তা : সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাড়াতে হবে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের দুঃসময়ের অসহায় মানুষদের নগদ সহায়তা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৬ লাখেরও বেশি দরিদ্র ও অসহায় পরিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেলেন। এসব দরিদ্র পরিবারের মধ্যে আছে ভাসমান মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনার নতুন ঢেউ মোকাবেলায় সরকারের ‘লকডাউন’ এর ফলে যে সব দরিদ্র পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় হয়ে পড়েছেন, এই জনকল্যাণ কর্মসূচি ঈদের সময় তাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। জীবন জীবিকা সচল রাখতে অর্থনীতি, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্যের চাকা অব্যাহত রাখা ছাড়া অন্য উপায় নেই। জনসংখ্যার আধিক্য সংকটকে আরও প্রবল করে তুলেছে। ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবার ছাড়াও সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ৬৪ জেলার ইউনিয়ন হিসেব করে জেলা প্রশাসকদের কিছু অর্থ দিয়ে রাখা হয়েছে, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। শিল্পী, কলাÑকুশলীদেরও অনুদান দেওয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, টেস্ট রিলিফ কর্মসূচি, টিসিবির মাধ্যমে সুলভে নিত্যপণ্য বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও বিবাদাপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়োজিত আছেন যারা এই করোনাকালে জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদের অনেকেরই কর্মসংস্থান নেই, গ্রামের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কারিগরেরাও পেশা হারিয়েছেন। গ্রাম-শহরের মধ্যবিত্ত মানুষ করোনার এই সংকটে নি¤œবিত্তে পরিণত হয়েছেন। এদের এক বড়ো অংশ হয় কর্মহীন অথবা বেতন হ্রাস পেয়েছে। ফলে দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য সীমায় নেমে গেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিত্যপণ্য প্রভৃতি খাতে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। শহরের অনেক পরিবার গ্রামে চলে গেছেন। করোনাকালে শহরে দারিদ্র্য বেড়েছে- বিভিন্ন গবেষণায় এটা উঠে এসেছে। সুতরাং মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তদের জন্য রেশনকার্ড কর্মসূচি সাময়িক হলেও চালু করা প্রয়োজন। দেশের সকল মানুষের জীবন-জীবিকার তথ্যভা-ার রাখা গেলে সরকারের সহায়তা কর্মসূচি সুফল দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নগদ সহায়তা কর্মসূচি উদ্বোধনকালে দেশের সামর্থবান ও বিত্তশালীদের প্রতি জনগণের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি কঠোরভাবে মেনে চলেও অনুরোধ জানান। তিনি টিকার ব্যাপারে জনগণকে আশ্বস্ত করেন। অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিকল্প নেই, রমজান এবং ঈদের সময় এ ব্যাপারে জনগণকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ভারতের করোনা পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর উদ্বেগের কারণ হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমাদের সুরক্ষায় সরকারিভাবে যেমন প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তেমনি জনগণকে করোনার সংক্রমণের শক্তিশালী ধরণ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। করোনা কতদিন চলবে তা অজানা তাই সরকারকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়াতে হবে, বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে।