কোভিড সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পেতে

মো. মহসীন »

কোভিড-১৯, হার না মানা এক শক্তিশালী ভাইরাস, যে ভাইরাসের আচরণ ও দ্রুত সংক্রমণ বিস্তারের কাহিনী শুনলে রীতিমতো ভীতি সঞ্চার না হয়ে পারে না। পৃথিবীর উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশের চিকিৎসকরা করোনার যে ভয়াবহতা ব্যক্ত করেছেন, তা অবশ্য বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তোলে। বর্তমানে কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলো এত শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে, সংক্রমিত রোগীরা সেরে ওঠার ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তায় থাকে, দ্রুত সময়ে তাদের একের পর এক শারীরিক জটিলতা শুরু হয়। সেরা ওঠা অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কয়েকবার টেস্ট করার পরও রিপোর্ট পজিটিভ মিলছে। এমনকি এই করোনা আক্রান্তের লক্ষণগুলি এখন দৈনিক নতুনত্ব পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের ৩১ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ হরণ করেছে এই নিষ্ঠুর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। সারা বিশ্বের মানুষ আজ এক চরম উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে শ্লথ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
ভ্যাকসিন তৈরির ফলে বিশ্বের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভাইরাসটির স্ট্রেইন বারেবারে মিউটেশন ঘটিয়ে খুব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগ আগামীতে কতটুকু সফলতা এনে দিবে, তা অবশ্য সময় মানুষকে অবহিত করবে। সম্প্রতি ভারতে করোনার নিত্য নতুন স্ট্রেইন সেখানে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ঘটিয়ে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এদিকে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ইরানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সেখানেও সংক্রমণের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, এই ধরনের আরেকটি শক্তিশালী ভাইরাস সার্স (সেভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ২০০২ সালে চীনে ব্যাপক মহামারির রূপ নিয়েছিল। গবেষকদের মতে, ভাইরাস সংক্রমণকালে তার নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকেÑযাকে বলা হয় মিউটেশন।তাদের মতে ,এই ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করে যাচ্ছে – যার ফলে ভাইরাসটি বেশি বিপজ্জনক হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এ ভাইরাসটির প্রকৃতিগত আচরণ এবং বারে বারে মিউটেশন কীভাবে রোধ করা যেতে পারেÑ সেই সম্পর্কে বিশদভাবে গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ আট নয় মাস অক্লান্ত গবেষণা চাালিয়ে কতিপয় দেশের গবেষক আর বিজ্ঞানীরা কিছু শক্তিশালী প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে অনেকটা কার্যকর হতে পারে। তাছাড়া এই ভাইরাসটি মানুষের ফুসফুসে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে এর বিস্তারণ মানুষ থেকে মানুষকে সংক্রমিত করে,তাই মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।
এই মহামারি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচার জন্য সাময়িক কোয়ারান্টাইনে থাকা, কিছু শিষ্টাচারে অভ্যস্ত থাকা আর ভ্যাকসিন গ্রহণ করাটাই সর্বাপেক্ষা নিরাপদ হতে পারে। আজও এই মহামারি প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এর ২য় ঢেউ মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশে নতুন করে সাময়িক লকডাউন, সাট ডাউন করা হচ্ছে। তাছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই মুহুর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত দেশগুলো নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সোশ্যাল ডিস্টেন্স ব্যাহত হলে এই মহামারির রূপ কত যে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কিছু দেশ যেমন ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল, আমেরিকা আর ভারত। বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের যে তা-ব অব্যাহত রয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে প্রভাব পড়া আদৌ বিচিত্র কিছু নয়। তাছাড়া, দেশেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দেশের পক্ষে বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি দেশের আর্থিকখাত টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার পোশাক কারখানাগুলো সচল রেখেছেন, যা দেশের আর্থিক মেরুদ-ের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোশ্যাল ডিস্টেন্স বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উদাসীনতা পরিলক্ষিত হওয়ায় দেশে করোনার মহাবিপদের শঙ্কা থেকেই যায়। লকডাউন পরিস্থিতির শিথিলতায় দেশের সকল শ্রেণির মানুষকে অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই জাতিকে সুরক্ষা দিতে পারে।
লেখক : প্রাবন্ধিক