কুমিল্লায় ৯ বগি লাইনচ্যুত

৪ ট্রেনের যাত্রা বাতিল। ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় পর বগিগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উভয় লাইনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল গতকাল রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। চট্টগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুটের ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে। লাইনচ্যুতির ঘটনায় এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

এদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় চারটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা-জামালপুরের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে।

এ ঘটনায় অন্তত তিন হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই চারটি ট্রেনে ২ হাজার ৮০০ আসন রয়েছে। অন্তত ৩ হাজার যাত্রী এসব ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়বেন।

চট্টগ্রাম স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে দেশের অন্যান্য স্টেশনের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পেলে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যাত্রা বাতিল হওয়া ট্রেনগুলো হলো- চট্টগ্রাম থেকে বিকেল তিনটায় ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস (৭০৩), ঢাকা থেকে রাত ১১টা ১৫ মিনিটের চট্টগ্রাম অভিমুখী তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২), দুর্ঘটনায় পড়া চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী সকাল সাড়ে ১১টার বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৫) ও জামালপুর থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী রাত ৮টা ১০ মিনিটের বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৬)।

রোববার (১৭ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া তেজের বাজার এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এ সময় লাইন থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম লেনে ট্রেনটির ৯টি বগি ছিটকে পড়ে। ওই ঘটনায় কোনো যাত্রী নিহত না হলেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, হঠাৎ গরমের কারণে লাইন বেঁকে গিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. সরদার সাহদাত আলী বলেন, ‘লাইনের কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো বলা যাচ্ছে না লাইন ক্লিয়ার হতে কত সময় লাগতে পারে।’

দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ঢাকার পথে ছেড়ে গেছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর ট্রেনটি সেখান থেকে আর ছাড়তে পারেনি। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত লাইন ক্লিয়ারের কোনো সিগন্যাল না পেয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনেই অপেক্ষায় ছিল ট্রেনটি।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে যাত্রীরা হাঁসফাঁস করছেন। বিশেষ করে বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের। বিকেলের দিকে বেশির ভাগ যাত্রীকে প্লাটফর্মে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেলেও সন্ধ্যায় গরমের মধ্যে বগিতেই বসে থাকতে দেখা গেল তাদের।

কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রী পার্থ সারথী মজুমদার বলেন, প্রথমবারের মতো কক্সবাজার এসেছিলাম পরিবার নিয়ে। ভীষণ আনন্দ করেছি। এখন ফেরার সময় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাইকে বলা হলো এক ঘণ্টা লাগতে পারে। এখন শুনছি, আরও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা নাকি অপেক্ষা করতে হবে!

পার্থ আরও বলেন, ‘সব যাত্রীই বিপাকে পড়েছেন। একবার ভাবছি বাসে যাব। কিন্তু নাইট কোচগুলো ১২টার দিকে। তাই ট্রেন ছাড়ার জন্যেই অপেক্ষা করছি। তবে ট্রেনের লাইন ক্লিয়ার হতে ঠিক কত সময় লাগবে, সেটি সবাইকে বললে ভালো হতো। অনেকেই সেই অনিশ্চয়তায় ট্রেন থেকে নেমে বিকল্প উপায়ে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।’

এ ব্যাপারে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, নাঙ্গলকোটের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এখন ঘটনাস্থলে। লাইনের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটি দেখে তারপর ঠিক করার পদক্ষেপ নিতে হবে। একটু সময় লাগবে। খবর সারাবাংলার।

মাসখানেক আগেও একবার ইঞ্জিন বিকল হয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস পথে অপেক্ষমাণ ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা।