কালুরঘাট সেতু কি দুঃখই হয়ে থাকবে

একসময় হোয়াংহো নদীকে বলা হতো চীনের দুঃখ। এখন আর সে দুঃখ নেই। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের ফলে সে দুঃখ অতীতের স্মৃতি হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের চাক্তাই খালকেও বলা হতো চট্টগ্রামের দুঃখ। তবে সে দুঃখ এখনো যায়নি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কর্ণফুলী সেতু, যা শুধু বোয়ালখালীবাসীর নয় চট্টগ্রামবাসীর দুঃখের কারণ হয়ে উঠেছে। গত ১৫ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সড়ক হয়েছে, পদ্মার বুকে সেতু হয়েছে, কর্ণফুলীর নিচে টানেল হয়েছে, কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে কিন্তু প্রায় শতবর্ষী এই সেতুর স্থলে নতুন একটি সেতু হয়নি । কর্ণফুলীর ওপারের বোয়ালখালী উপজেলার অনেকেই প্রতিদিন নদী পার হয়ে শহরে আসেন চাকরি বা পেশাগত কারণে। শহর থেকেও অনেকে বোয়ালখালীতে যান নানা কাজে।
কক্সবাজারের পথে রেল চালুর জন্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ অগাস্ট; তখন বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবর থেকে ফের যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। তবে আট মাস পেরোলেও এখনো সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।
সেতুর বিকল্প হিসেবে চালু করা হয়েছিল তিনটি ফেরি। যার মধ্যে দুটি ইতোমধ্যে বিকল হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে কেবল একটি ফেরিতে পারাপার চলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বোয়ালখালী উপজেলার হাজারও মানুষ। একটি ফেরির কারণে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির জট সৃষ্টি হচ্ছে দুই পাড়েই। ফেরিতে ওঠার জন্য আগে যেখানে ৫/১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হত, এখন সেখানে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে।
সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই দুটি ফেরিকে উভয়মুখী চলাচলের জন্য রাখা হয়েছিল, একটিকে রাখা হয়েছিল ‘স্ট্যান্ডবাই’। মাস খানেক আগে থেকেই একটি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ার পর দুটি ফেরি দিয়ে পারাপার চলছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকল হয়ে যায় আরেকটি ফেরি। এরফলে সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে শাহ আমানত সেতু হয়ে অনেক পথ ঘুরে।
এখন রমজান মাস। মানুষের যাতায়াত বেড়েছে ব্যবসাসহ নানামুখী কাজে। সামনে ঈদে বাড়িফেরা মানুষের চাপ বাড়বে সড়কপথে। আর এসময়ে যদি এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় যাত্রীদের তাহলে তাকে দুঃখ বলে অভিহিত না করে উপায় নেই। এখন আমরা জানতে চাই এই দুঃখের অবসান হবে কবে?