কারাগারে অ্যান্টি-ভাইরাসের স্রষ্টা জন ম্যাকাফির মৃত্যু

বিবিসি »

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উদ্যোক্তা জন ম্যাকাফিকে স্পেনের বার্সেলোনার একটি কারাগারের কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের কারণে স্পেনের আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে রাজি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে।

কাতালান বিচার বিভাগ বলেছে, কারাগারের চিকিৎসকরা তাকে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও সফল হননি।

কারাগার থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সব ইঙ্গিত দেখে মনে হচ্ছে যে ম্যাকাফি নিজেকে নিজেই শেষ করে (আত্মহত্যা) দিয়েছেন

প্রযুক্তি বিশ্বে বিতর্কিত এই ব্যক্তির কোম্পানি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে অ্যান্টি-ভাইরাসের সফটওয়্যার বাজারে আনে।

তার এই ম্যাকাফি ভাইরাস স্ক্যানের কারণে কম্পিউটার বিশ্বে শত শত কোটি ডলারের শিল্প গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে প্রযুক্তিজগতে প্রভাবশালী ইন্টেলের কাছে এটি ৭৬০ কোটি ডলারে বিক্রি করা হয়।

২০২০ সালের অক্টোবরে জন ম্যাকাফি তুরস্কে যাওয়ার জন্য বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে স্পেনে গ্রেপ্তার হন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, কনসাল্টিং বা পরামর্শ বিষয়ক কাজকর্ম, বক্তৃতা-ভাষণের মত স্পিকিং এনগেইজমেন্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি এমনকি নিজের জীবনগাঁথার স্বত্ব বিক্রি করে তিনি শত শত কোটি টাকা আয় করলেও গত চার বছর ধরে তিনি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অভিযোগ করেছে যে ম্যাকাফি তার আয়ের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্টে নমিনিদের নামে জমা করে ট্যাক্সের দায় এড়িয়ে গেছেন।

তার বিরুদ্ধে ইয়ট, রিয়েল এস্টেটসহ অন্যদের নামে কেনা আরও বহু সম্পদের হিসাব গোপন করার অভিযোগ ছিল।

ম্যাকাফিকে এসব অভিযোগের মুখোমুখি করতে বুধবার স্পেনের জাতীয় আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয়।

 

, প্রযুক্তি খাতের এই বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে ফ্লোরিডার মায়ামি বিচে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ম্যাকাফি বারবার দাবি করেছিলেন যে তাকে ধরার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে – তবে আদালত জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বা আদর্শিক কারণে মামলা হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই- স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল পাইস এই খবর দিয়েছে।

এই উদ্যোক্তা ইংল্যান্ডের গ্লৌচেস্টারশায়ারে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি তার প্রযুক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং ম্যাকাফি ভাইরাস স্ক্যান সামনে এনে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন।

যদিও কম্পিউটার সুরক্ষার এই অগ্রদূত একবার বিবিসির কাছে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি নিজের কম্পিউটারে কখনও এই সফটওয়্যারটি বা অন্য কোন অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেননি।

“আমি নিয়মিত আমার কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস [ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস] পরিবর্তন করে, আমার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোয় নিজের নাম সংযোজন না করে এবং যেসব সাইটে ভাইরাস ধরতে পারে পারে, সেগুলোয় না ঢুকে নিজেকে সুরক্ষা দেই। যেমন পর্ণ সাইটগুলো, আমি কখনও সেদিকে যাই না,” – ২০১৩ সালে বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক রিপোর্টার লিও কেলিওনকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি ২০১৬ এবং ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবার্টেরিয়ান পার্টির প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

২০১৯ সালে ম্যাকাফি ট্যাক্সের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন যে আট বছর ধরে তিনি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেননি কারণ “কর অবৈধ। ”

একই বছর ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে অস্ত্র আনার অভিযোগে তাকে অল্প সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল।

বিশ্লেষণ: জেমস ক্লেটন, নর্থ আমেরিকা প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা

কোনও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সাধারণত যেমন হয়ে থাকেন, ম্যাকাফি তার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন। তিনি সব সময়ই উদ্ধত, বেপরোয়া এবং কোন না কোন কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন।

ম্যাকাফি নিজের নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেই সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। এতে তিনি ব্যাপক সফলতা, অর্থ – সবই পেয়েছিলেন।

তিনি কোটি কোটি ডলারের কম্পিউটার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের শিল্প তৈরি করতে সহায়তা করেছিলেন।

ম্যাকাফি ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, তবে সেটি তিনি বাস্তাবায়ন করতে পারেননি। তার খিটখিটে মেজাজই তাঁকে সারাজীবন সমস্যায় ফেলেছে।

২০১২ সালে তিনি গুয়াতেমালায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি বেলিজে পলাতক ছিলেন, যেখানে পুলিশ তার প্রতিবেশীর মৃত্যুর তদন্ত করছিল।

ওই হত্যার সাথে তিনি তার জড়িত থাকার অভিযোগ সবসময় তিনি অস্বীকার করে আসছেন।

এই বিশিষ্ট লিবার্টেরিয়ান, দক্ষ বক্তা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আগ্রহী ব্যক্তির এখনও বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা ছিল।

তার তার সর্বশেষ উদ্ধত আচরণ ছিল সাম্প্রতিক বছরের উপার্জনের উপর কর ফাঁকি দেয়ার ঘটনাটি।

১৯৮০ এবং ১৯৯০ দশকে প্রযুক্তি খাতের বিকাশে ম্যাককাফি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তবে তাকে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসাবেও স্মরণ করা হবে, যিনি জীবনে এমন এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন যা তার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।