কাজীর দেউড়ি রণক্ষেত্র

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, দুপক্ষে আহত অর্ধশতাধিক, আটক ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক »

১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে নগরে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৫ পুুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এদিকে পুলিশ বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এতে দু পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের আশেপাশে এ ঘটনা ঘটে।

নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সড়কে ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করে বক্তব্য রাখছিলেন। এতে অংশ নিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশে যোগ দিতে আসছিলেন। এর মধ্যে বিকাল সাড়ে ৩টার কিছু পরে সমাবেশ স্থলের অদূরে কাজীর দেউড়ি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর আসলে সমাবেশ শেষ করেন বিএনপি নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজীর দেউড়ি মোড়ে একটি মিছিল আসার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিশু পার্কের দিকে চলে যান। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

সে সময় কাজীর দেউড়ি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে রাখা পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন বিএনপি কর্মীরা। পরে তারা দিগি¦দ্বিক ছোটাছুটি শুরু করে বেশকিছু যানবাহন ও দোকান ভাংচুর করে।

কাজীর দেউড়ি থেকে আলমাস সিনেমা হল মোড়, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সড়কে বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

সংঘর্ষের সময় সড়কে আটকে থাকা গাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বিএনপি কর্মীদের ভাংচুরের কবলে পড়েছে চিকিৎসক ও সাংবাদিকের গাড়িও।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ ও মিছিলে আমরা কোনো ধরনের বাধা দেইনি। তারা পুলিশের ওপর বিনা কারণে হামলা করছে। বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করছে। এক ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের ১০ জনের বেশি পুলিশ আহত হয়েছেন।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও কাজীর দেউড়ি মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে যুবদলের একটি মিছিল আটকে দেওয়া হয়। যুবদল কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে আসার চেষ্টা করলে ‘বিনা উস্কানিতে’ পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ঘোষিত ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আমরা আমাদের বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশ পালন করছিলাম। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নেতা কর্মীরা মিছিলসহ নূর আহমেদ সড়কে আসছিলেন। হঠাৎ আমরা শুনতে পায় কাজীর দেউড়ি মোড়ে অসংখ্য গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। এ সময় নূর আহমদ সড়ক দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা আসলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, যার মধ্যে একজনের চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত ৩০ থেকে ৩৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।’

ট্রাফিক পুলিশের গাড়িতে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের গাড়িতে কে আগুন দিয়েছে আমি জানি না। এসব কথা পুলিশ সবসময় বলে আসছে। আমরা কি কারণে পুলিশের ওপর হামলা করতে যাবো। এ ঘটনায় কারা দায়ী আশপাশের মানুষ তা দেখেছে।’

বিএনপির দাবি ‘ঘটনাটি পুলিশের সাজানো যা বিএনপির সমাবেশকে ‘ভ-ুল করার চেষ্টা’ এমন মন্তব্য সম্পর্কে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘বিএনপির অনুমোদিত নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ ছিল তাদের অফিস থেকে নেভাল রোড পর্যন্ত। কিন্তু তারা তা না করে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করার জন্য উচ্ছৃখলভাবে মিছিল বের করে। সেখান থেকে হঠাৎ পুলিশের উপর হামলা করে, ট্রাফিক পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়, সিএমপির অফিস ভাঙচুর করে। এতে বাধা দিলে সিএমপি’র রুবেল, আজাদ ও ট্রাফিক পুলিশ বিপ্লবসহ পাঁচজন আহত হন। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

ঘটনার পরবর্তীতে পুলিশ বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় আশপাশের এলাকাতে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।