করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য : আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ, আর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রকাশিত মাসিক ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র‌্যাংকিংয়ে’ এই তথ্য এসেছে। র‌্যাংকিংয়ে আগের চাইতে ৪ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরবের মতো দেশগুলির চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। র‌্যাংকিংয়ের জন্য ১০টি প্রধান বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে, কোভিডÑ১৯ কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি, সামগ্রিক মৃত্যুহার, পরীক্ষা ক্ষমতা, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা, অর্থনীতির ওপর ভাইরাস সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং চলাচলের স্বাধীনতা ইত্যাদি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষমতার শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ( স্কোর ৮২-৪০), তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষ দশে রয়েছে। বাংলাদেশের স্কোর ৫৯-২, পাকিস্তানের ৫৪-ভারতের স্কোর ৫০, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যথাক্রমে ৩০ ও ৩৭তম।
কোভিডÑ১৯ শুরুর প্রথম ৩ মাস লকডাউন অবস্থায় সরকারের ত্রাণ সাহায্য, আর্থিক প্রণোদনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, খাদ্যভা-ার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভা-ার চালু রাখতে কৃষকদের প্রশংসনীয় ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কোভিড মোকাবেলায় প্রথমদিকে অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে কিন্তু দ্রুত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষজ্ঞ মহল চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায় সোয়া লাখ কোটির মতো প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে সহায়ক হয়েছে। জীবন ও জীবিকার লড়াই এক সাথে চালাতে শ্রমজীবী মানুষ, ব্যবসায়ী দোকানদাররা পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে গেছেন। আমাদের জিডিপি অনেক সমৃদ্ধ ও ধনী দেশের চাইতে অনেক ভাল এমনই মত বিশ্বব্যাংকের।
তবে সাফল্য থাকলেও আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। এখন বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, করোনার নতুন ধরণের সংক্রমণের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এটা কোভিড মহামারির বিবর্তনমূলক রূপও হতে পারে। এরপরও আমাদের সাবধান হতে হবে।
বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কোয়ারেনটাইন ও আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থায় কোনরূপ অবহেলা-ঘাটতি বিপজ্জনক হতে পারে। করোনা প্রতিরোধের এই পর্যায়ে কিছু অব্যবস্থাপনার বিষয় পত্রপত্রিকায় আসছে। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রধান কাজ হবে টিকা সংগ্রহ, দেশে এগুলির যথাযথ সংরক্ষণ, টিকা প্রদান ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলাপূর্ণ রাখা। এ সকল ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ কাম্য। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জনগণকে বাধ্য করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জনগণ সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কোন সময় সংক্রমণ মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। মাস্ক পরিধানে অনীহা মারাত্মক বিপর্যয় আনতে পারে। কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রাখতে হবে। এখন কর্মসংস্থানের দিকটিতে গুরুত্ব দিতে হবে, সেই সাথে গরিব ও নি¤œবিত্ত মানুষদের অধিক প্রণোদনা ও সুলভে তারা যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পারে, সে ক্ষেত্রে খোলা বাজার, ন্যায্যমূল্যের বাজার ও কাজের বিনিময়ে নানা প্রণোদনা কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।