কক্সবাজারের ২১ ইউপিতে ভোট আজ

সহিংসতার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
আজ কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলা, রামু ও উখিয়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। তবে সদ্য ঘটে যাওয়া দুটি নির্বাচনী সহিংসতার কারণে ১১ নভেম্বরের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছুটা শংকা দেখা দিয়েছে। আর এ নিয়ে আতঙ্কিত ভোটাররা।
কিন্তু শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট উৎসব অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার রাতে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাব পুলিশ বিজিবি ও আনসার সদস্য কাজ করবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ৫ নভেম্বর রাতে ঝিলংজা ইউপি’র লিংকরোডে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন রয়েছেন একই ইউপি’র ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ও নিহতের ছোট ভাই কুদরত উল্লাহ সিকদার। এর তিনদিন পরে পিএমখালী ইউপির তোতকখালীতে প্রতিপক্ষের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম রেজা।
এছাড়া চৌফলদণ্ডীতে সুষ্ঠু ভোটের জন্য মানববন্ধন করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। সবকিছু মিলিয়েই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ভোটাররা। তবে প্রশাসন ও পুলিশ বলছে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভোট শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে রামু ১১টি ইউনিয়নের ১০০টি কেন্দ্রে, উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের ৫০টি কেন্দ্রে এবং সদর উপজেলার ৫৩ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।
প্রার্থী ও ভোটারদের দেয়া তথ্যমতে সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, ভারুয়াখালী, পিএমখালী ও ঝিলংজা ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ৫ ইউনিয়নের মোট কেন্দ্র ৫৭টি। এরমধ্যে ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ।
রামু উপজেলার ফতেখারকুল, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, জোয়ারিরনালা, রশিদ নগর, ইদগড়, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, খুনিয়াপালং, রাজারকুল ও কাউয়ারখোপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ১১ টি ইউনিয়নের মোট ভোট কেন্দ্র ১০০ যার মধ্যে ৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ।
একইদিন উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং, রত্না পালং রাজা পালং, জালিয়া পালং ও পালং খালী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই উপজেলার ৫০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩০ টি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোছাইন বলেন, কক্সবাজার জেলার তিনটি উপজেলার ২০৩টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ৮৮টি কেন্দ্র সাধারণ ও ১০৫টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, বুধবারের মধ্যেই সকল কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে যাবে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটের দিন ব্যালেট পাঠানো হবে।
কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহাজাহান নূরী বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২১টি ইউপিতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রে কেউ যদি কোন সমস্যা করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যালেট পেপার ছিনতাই কিংবা ভোট ডাকাতির চেষ্টা করলেই গুলি করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান বলেন, তিনটি উপজেলায় ৪৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে সদরের ৫টি ইউপিতে ১২ জন, রামুর ১১টিতে ২২ জন এবং উখিয়ার ৫টিতে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনকে সাজানো হয়েছে। যদি কোন কেন্দ্রে কোন অঘটন ঘটে তবে টহল টিমগুলো সাথে সাথে সে কেন্দ্রে যাবে।