কক্সবাজারে রেল, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত হোক দ্রুত

বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে এই প্রকল্পের অধীন নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনেরও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প উদ্বোধনের কারণে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হলো। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই এই রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করবে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের বিপরীতে খরচ হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।
উদ্বোধনের ফলে কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ১২টি ট্রেন ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করবে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর গন্তব্য স্টেশন চট্টগ্রামের পরিবর্তে কক্সবাজার পর্যন্ত বর্ধিত করে ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো, যাত্রীসেবা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পূর্বের দোহাজারী পর্যন্ত চলাচল করা লোকাল-মেইল ট্রেনগুলোর যাত্রাপথ কক্সবাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তবে এরমধ্যে কিছু সমস্যাও আছে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথটি বর্তমানে বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেকশনটিতে বর্তমানে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও একটি তেলের গাড়ি। রেলপথটির অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে চলাচলরত ট্রেনগুলো গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে।
যদিও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যেসব টুরিস্ট ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেগুলোর পরিচালন গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রড গেজ ট্রেনের জন্য ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার আর মিটার গেজ ট্রেনের জন্য ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এ অংশ ডুয়াল গেজ করা না হলে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল করিডোরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডোরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইনে পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট, আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মিত হলেও সাতকানিয়া এলাকায় নির্মিত রেললাইনে পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। কারণ বিগত বন্যায় বিশাল অংশ ধসে পড়ায় অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে আসা হয়। কেওচিয়া ইউনিয়নবাসী তখন পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করে। লে-আউট ডিজাইনে দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ ট্র্যাক রেল লাইনে সাতকানিয়া উপজেলায় ঢেমশা আলমগীরপাড়া এলাকায় যাত্রী ওঠানামার জন্য একটি স্টেশন রাখা হলেও তা এখনো নির্মিত হয়নি ।
আমরা আশা করব কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেবে। প্রধানমন্ত্রী যে আগ্রহ নিয়ে প্রকল্পটি শেষ করিয়েছেন এবং জনগণ যে আশায় উদ্দীপ্ত হয়েছেন তা যেন পূর্ণ হয়। আগামী বছর থেকে এই রেলপথে সব ধরনের সুযোগ নিয়ে যেন যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ও অসমাপ্ত অবকাঠামোর কাজে নজর দেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।