কক্সবাজারে বাড়ছে অপমৃত্যুর ঘটনা

মাসের প্রথম সপ্তাহে হোটেল
থেকে উদ্ধার ৩ জনের লাশ

দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার

কক্সবাজারে হোটেল কক্ষে বাড়ছে অপমৃত্যুর ঘটনা। চলতি আগস্ট মাসের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বিভিন্ন হোটেল ও কটেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনজনের মরদেহ। তৎমধ্যে দু’জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় লোক রয়েছেন। বেড়াতে এসে এমন মৃত্যু কারো কাম্য না হলেও হঠাৎ করে অপমৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে কক্সবাজারে।
সূত্র জানায়, শনিবার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের ‘সি কক্স’ আবাসিক হোটেলের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে খালেদ আশরাফ বাপ্পি (২২) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাপ্পি ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কের ম্যানেজার। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজার কাজীর রোড এলাকার বাসিন্দা। কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি হোটেলে পার্টটাইম চাকরি করতেন তিনি। তার মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
‘সি কক্স’ হোটেলের রিজার্ভেশন অফিসার অর্ণব বলেন, ‘হোটেল থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের সাথে লাগোয়া হোটেলের স্টাফদের কোয়ার্টার। ওখানে স্টাফরা রাত্রিযাপন করেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হোটেলের ডিউটি শেষে কোয়ার্টারে চলে যান বাপ্পি। পরে তাকে মৃত অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই সময় কোয়ার্টারে কেউ ছিল না এবং তার রুমটি ভেতর থেকে আটকানো ছিল।’ অন্যদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক রিয়াজ জানান, হোটেল ‘সি কক্সের’ ভবনের দ্বিতীয় তলার কক্ষে বাপ্পিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে কক্ষটি তল্লাশি করে আলামত হিসেবে ফাঁসের একটি গামছা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। কোনও অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটেল জোনে দি আলম গেস্ট হাউজ নামক একটি হোটেলের ৪০৬ নম্বর কক্ষ থেকে চিরকুট লিখে কাউসার (২৬) নামের এক পর্যটক আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয় বলে চিরকুটে উল্লেখ করেছেন ওই পর্যটক। কাউসার জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, ওই ব্যক্তি বিষাক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি। তার কাছ থেকে কয়েকটি চিরকুট পাওয়া যায়। যেখানে তিনি তার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি এবং ওই চিরকুটে হোটেল কর্তৃপক্ষকে হয়রানি না করার জন্য লিখেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, সোমবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচের একটি কক্ষ থেকে সৌরভ সিকদার (৩২) নামের এক পর্যটকের মরদেহ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। নিহত সৌরভ ঢাকার পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনিরুল গিয়াস।
হোটেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ সিকদার ও তার স্ত্রী আনিকা তাসনিম গত ১৬ জুলাই থেকে এ হোটেলে অবস্থান করছেন। তবে তারা কি উদ্দেশ্যে এতদিন হোটেলে অবস্থান করেন, এ বিষয়ে জানা যায়নি।
কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রহিম জানান, বেড়াতে এসে আত্মহত্যার পর বেছে নেওয়া কারো কাছে কাম্য নয়। তবুও ইদানিং অপমৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে কক্সবাজারে। এজন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। অনেক সময় অপমৃত্যুগুলোও রহস্যে ঘেরা থাকে। সঠিক অনুসন্ধান ও সচেতন হলে এসব মৃত্যুর ঘটনা কমবে।