কক্ষ সংকটে ব্যাহত শ্রেণি কার্যক্রম

সাতকানিয়া/ দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী উচ্চ বিদ্যালয়

মো. জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া »

যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত। এ শর্ত পূরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ ও এমপিওভুক্তি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনো সরকারের এ প্রচেষ্টার ছোঁয়া লাগেনি। এ যেন ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে বহুতল ভবন নির্মিত হলেও এ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি সরকারিভাবে কোন ভবন নির্মিত হয়নি। ফলে পুরানো ভবনে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীরা কোনো রকমে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকায় বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে জায়গা না পেয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করে দিন পার করছে। ফলে এ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দিন দিন এ বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এতো দৈন্যতার মাঝেও পুরো উপজেলায় সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে এ বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

ভবনসহ শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেন-দরবার করে কোন সুরাহা করতে না পেরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সরণাপন্ন হন। স্থানীয় সাংসদ বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে ডিও লেটার দিলেও অদ্যাবধি কোন সুরাহা মিলেনি। ফলে দিনের পর দিন এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে ঢেমশা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী এলাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস। শিক্ষা প্রসারে বৃহৎ আয়তনের এ এলাকায় কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০০৪ সালের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুরুল আমিন (বর্তমানে মৃত) ওই এলাকায় এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এলাকার শিক্ষানুরাগী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় সাতকানিয়া কলেজ সংলগ্ন চৌমুহনী এলাকায় প্রায় আড়াই’শ শিক্ষার্থী নিয়ে সেমিপাকা টিনশেট ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেন। ওই বিদ্যালয় ২০০৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিক ও ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানে অনুমতিপ্রাপ্ত হয়।

এর আগে ২০২০ সালের নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ ও ২০২৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এমপিওভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক, গণিত, ইংরেজি ও ইসলাম ধর্মসহ ৪ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির নথিপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা যায়, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। একজন জুনিয়র শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করছেন। আগামী ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেজিস্ট্রেশনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্নে সেমিপাকা টিনসেডের চার রুমে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হয়। বিগত বন্যায় পুরো বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতর থেকে মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। যা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়েও শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। পরবর্তীতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় নতুনভাবে নির্মিত হয় সেমিপাকা টিনসেটের কয়েকটি কক্ষ। বর্তমানে এ কক্ষগুলোতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী জানান, দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ক্লাস করার ফলে মাঝে মাঝে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রমে সব শিক্ষার্থীকে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী বাহিরমুখী হয়ে ঘোরাফেরা আর ক্লাসে অনুপস্থিতি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে তারা শিক্ষা জীবন থেকে মাঝপথে ঝরে পড়ছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরের মধ্যে এ বিদ্যালয়ে কোন সরকারি ভবন নির্মিত হয়নি। বর্তমানে এলাকার সাংসদের সহযোগিতায় সেমিপাকা টিনসেডের একটি ভবনে কোন রকমের শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার পেয়েছি। শীঘ্রই ভবন বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে নতুন ভবন পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে ভবন পাওয়া যাবে।’

সাংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী- এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমি ডিও লেটার পাঠিয়েছি। আশা করি, নতুন ভবনের জন্য আর বেশি বেগ পেতে হবে না।’