একই মঞ্চে বিপ্লব, আমিন ও নদভী তুললেন ঐক্যের হাত

লোহাগাড়ায় শোক দিবসের সমাবেশ

‘দেশপ্রেম না থাকলে রাজনীতির পরিপূর্ণতা আসেনা। সংগঠনকে দেশপ্রেমের বিদ্যাপীঠ হিসেবে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক জ্ঞান, সততা, আচার-আচরণ সবকিছুই একজন নেতা ও কর্মীকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এদিকটার প্রতি যত্নবান হয়ে পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দায়িত্বশীল নেতা কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বর্তমান সময়োপযোগী করে গড়ে তুলে অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অনুৎসাহিত করতে হবে।’
গতকাল সোমবার দুপুরে মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এদেশের যতবড় অর্জন সব আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে, এজন্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, ভোগ-লালসা ত্যাগ করে নিজকে আত্মবলিদান করার মতো বহু নজির আওয়ামী লীগই দেখাতে পেরেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, এই দলের কাছেই দেশপ্রেম আছে, এই দলের হাতেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। আজ গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার চিন্তা, সততা, দৃঢ়তা, সাহস, প্রজ্ঞা বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। দেশের সার্বিক গুণগত পরিবর্তন তারা অবলোকন করে বলছে শেখ হাসিনা একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত এবং শেখ হাসিনার হাতেই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ২২ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কারা হত্যার এই ষড়যন্ত্র করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলা চালাতে তারেক রহমান, মন্ত্রী লুৎফুর রহমান বাবর, শিক্ষা-উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ হাওয়া ভবনে বসে ১৪ আগস্ট নির্দেশ দিয়েছিল। এটি আমার কথা নয়, এই ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে তাদের কথা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুনিদের বৈধতা দিতে সেদিন নেপথ্যের নায়ক জিয়া রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার না করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিল। তথ্য প্রযুক্তির কারণে অনেক তথ্য আমাদের সামনে চলে আসছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ জিয়া রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। সে সময় জিয়া বলেছিলেন ‘গো অ্যাহেড’।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন হিরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মাদ নেজামুদ্দীন নদভী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় বড়ুয়া, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, কলাউজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী ইছহাক মিয়া, পুটিবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক ও বড়হাতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিটন বড়ুয়া রোনা প্রমুখ।
এ সময় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পাঁচ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ১৯৭১ এ সদ্য অর্জিত রক্তস্নাত বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো মজবুত করতে সময় লেগেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর কঠিন সময়ে পাক মার্কিন মদতে স্বাধীনতার পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের চক্রান্তে জিয়ার সমর্থন নিয়ে জুনিয়র কয়েকজন সামরিক অফিসার বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ফলে জাতি হারিয়েছে সঠিক পথের সন্ধান, হারিয়েছে সম্মান ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ। যার কুফল সারা জাতি আজ ভোগ করছে। দেশপ্রেমের অনন্য প্রতীক বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা বাড়লে দেশের মর্যাদা বাড়বে। তার দেখানো পথ বাংলার জনগণের মুক্তির পথ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আগস্ট আমাদের শোকের মাস, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কয়েকবছর আজকের প্রধানমন্ত্রীকে তার ছোট বোনসহ এতিমের মতো দেশে দেশে ঘুরতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জিয়া ও তার সৃষ্ঠ দল এদেশকে দুর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গীর দেশে পরিণত করেছিল। আজ সেখান হতে আমরা উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী এমপি বলেন, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে দলের শেকড় বিস্তৃতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছেন। কারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল? জনগণের কাছে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ সকল পরাজিত অপরাধী চক্র এখনো সক্রিয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঐক্য মজবুত করে আদর্শ দিয়েই এই দুষ্টচক্রের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে অর্জিত অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি