উদ্বোধনকালে আইজিপি : বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপিত নৌ তদন্ত কেন্দ্র

তুমব্রু সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নৌ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতায় এই কেন্দ্রে কর্মরতরা নিজেদের দায়িত্ব সহজে পালন করতে সক্ষম হবে। তিনি গতকাল রোববার সকাল ১১টায় সিএমপির কর্ণফুলী থানার আওতাধীন ডাঙ্গার চর নৌ তদন্ত কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন।
নৌ পুলিশের সাথে নৌ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের সাথে সমন্বয়ের কথা তুলে তিনি বলেন, কাজ করার ক্ষেত্রে নৌ পুলিশ এবং সিএমপির সাথে কোনোরূপ অসুবিধা হবে না। নৌ পুলিশের বিশাল এরিয়া রয়েছে। আর নৌ তদন্ত কেন্দ্র মূলত বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করবে। তাই সামুদ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে নৌ পুলিশ এবং সিএমপি পরস্পর সমন্বয় করে কাজ করবে।
নৌ তদন্ত কেন্দ্রের যাতায়তের বিষয়ে আইজিপি জানান, যখন নতুন কোনো কাজ করা হয় তখন কিছু কিছু সমস্যা থাকে। সরকার যখন ভবন করেছে তখন নিজস্ব নৌযানের ব্যবস্থাও করে দেবে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ হেফাজতে আসামি মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত শৃঙ্খল বাহিনী। শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। বিশাল এই বাহিনী নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। আমাদের পুলিশ হেফাজতে কারো মৃত্যু হয়ে থাকলে একজন ঊর্ধ্বতন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল করে লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জড়িত যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।
নিজস্ব জায়গা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অস্থায়ী থানার বিষয়ে তিনি জানান, যেসব থানায় স্থাপনা প্রয়োজন সেসব থানায় নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ কাজে নির্দিষ্ট লোক দায়িত্বে রয়েছে। সরকারের পলিসি অনুযায়ী সব থানায় নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হবে।
বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সঙ্গে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ‘বিজিবি আমাদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা চাইবে, আইনিভাবে আমরা সেই সহযোগিতা দেব।’
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধনী লোককে টার্গেট করে ঘর ডাকাতির বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন অফিসার জানান, এরকম ঘটনার বিষয়ে আমরা শুনেছি। সারাদেশে এমন ঘটনা সংঘটিত হলে আমরা তাতে কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। এমন কাজে জড়িত থাকার অপরাধে অনেককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এই ধরনের চুরি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনেছি। অনেক বিভিন্ন সময় আমরা চুরি যাওয়া মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ কাজ করছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এ এস এম মাহাতাব উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দরের মূল অপারেশনাল এরিয়াকে শাহ আমানত ব্রিজ হতে বহির্নোঙ্গর পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে মোট চারটি নৌতদন্ত কেন্দ্র নির্মাণে গত ২০০২ সালের ৯ জানুয়ারি সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
চারটি কেন্দ্র হলো ডাঙ্গার চর, চাক্তাই, রাঙ্গাদিয়া ও গুপ্তখাল নৌ-তদন্তকেন্দ্র। চারটি নৌ-তদন্ত কেন্দ্রের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ডাঙ্গার চর কেন্দ্রের জন্য ভূমি বরাদ্দ করে। রাঙ্গাদিয়া ও গুপ্তখাল নৌ-তদন্তকেন্দ্রের ভূমি বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডাঙ্গার চর নৌ-তদন্ত কেন্দ্রে টাইপ-১ অনুযায়ী ৬ তলাবিশিষ্ট ২ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি নৌ-তদন্তকেন্দ্রে ২ জন এসআই (নিরস্ত্র), ২ জন এএসআই (নিরস্ত্র), ২ জন এএসআই (সশস্ত্র), ৩০ জন কনস্টেবল, একজন বাবুর্চি ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ মোট ৩৮ জন লোক মঞ্জুর করা হয়। চারটি নৌ তদন্তকেন্দ্রের মোট জনবলের সংখ্যা ১৫২ জন।