উত্তর জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে আসছেন কারা?

১৯ বছর পর আজ সম্মেলন, সভাপতি-সম্পাদক পদে লড়ছেন ৩১ জন

মোহাম্মদ নাজিম, হাটহাজারী »

দীর্ঘ ১৯ বছর পর উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন আজ ২৯ মে। এ সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। উত্তরের দায়িত্ব নিতে সভপতি-সম্পাদক পদে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ৩১ জন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের চেয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ বেশি চলছে। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ নিজ নেতার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। সমর্থকদের মধ্যে কার নেতা পদ পাবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

হাটহাজারী পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন। সব প্রস্তুতি শেষ করেছে সম্মেলন পরিচালনা কমিটি।

হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ- এই ৭ উপজেলা নিয়ে ধরা হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা। সম্মেলন উপলক্ষে নেতা-কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর ছবি দিয়ে তৈরি করছেন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির চালান। শেষমুহূর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। আবার কেউ কেউ ধরণা দেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরে-ফিরে আলোচনা একটাই, এবারের সম্মেলনে কারা আসছেন নেতৃত্বে। বিশেষ করে শীর্ষ দুই পদ নিয়েই সবার আগ্রহ। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে নতুন ও পুরাতন নেতাদের কর্মকীর্তি নিয়ে। কারা নেতৃত্বে আসলে জেলা যুবলীগ শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর উত্তর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। এ সময় সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহমদকে সভাপতি, এসএম শফিউল আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও গত ১৯ বছরেও কমিটি হয়নি। ব্যক্তিগত কারণে সভাপতি সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহমদ পদত্যাগ করলে কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সহসভাপতি জাফর আলম। যদিও সম্মেলন ছাড়াই ২০১২ সালের দিকে মো. ওমর ফারুক যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সহসভাপতি এসএম আল মামুনকে সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে পুরোনো কমিটি বহাল রাখা হয়। তারা দীর্ঘ ১০ বছর পার করেন।

এদিকে চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এতে সভাপতি পদের জন্য ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ২২ জনের আবেদন জমা পড়ে। এছাড়া গত ১০ মে আওয়ামী যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। ১৪-১৬ মে পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়েছে।
সম্মেলন সফল করতে গঠন করা হয় ১২টি উপকমিটি। এর মধ্যে রয়েছে- অর্থ উপকমিটি, প্রচার-প্রকাশনা উপ কমিটি, শৃঙ্খলা উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটি, সাংস্কৃতিক উপকমিটি, অভ্যর্থনা উপকমিটি ও স্বাস্থ্য উপকমিটি। প্রস্তুতি কমিটিতে উত্তর জেলা যুবলীগের কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সব সাংগঠনিক ইউনিট ও পৌরসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্মেলন ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিভিন্ন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে আলোচনায় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হওয়া হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য গোলাম কিবরিয়া, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বপন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, নুরুল মোস্তফা মানিক এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আবুল বশর।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই কমিটির সাবেক সদস্য মো. সাহেদ সরওয়ার, চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, এসএম আল নোমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সিটি কলেজের সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামসুদ দোহা সিকদার আরজু, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন বাবু।
গতকাল শনিবার বিকালে উত্তর জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, সংগঠনকে গতিশীল রাখতে অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসময়ে যুবলীগের রাজনীতি করেছি। মানুষের কল্যাণে মানবিক কাজগুলো করতে সুযোগ চাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমার অতীত ত্যাগ, শ্রম ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করবেন আশা করি।

গতকাল বিকালে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বলেন, আজকের যুবলীগ সব অনৈতিক ও অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবদমন করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে। জেলা, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অসংখ্য মামলায় বার বার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। সেটার মূল্যায়ন কেন্দ্রীয় যুবলীগ করবে বলে আশা করি।
গতকাল চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম সুপ্রভাতকে বলেন, বির্তকিতদের যুবলীগে স্থান হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্দিনের কর্মীরা যদি রাজনীতি থেকে ছিটকেও পড়ে লাইনচ্যুত হয়, তাদের পুনরায় আনা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে দুর্দিনের সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির মতো অন্য কমিটি গঠনেও বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।