ইতিহাস বিকৃত করে আওয়ামী লীগ

কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যাবার পথে ষোলশহরে পুলিশের বাধা

নগরে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সমাবেশে মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে। ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান, প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল রোববার বিকেলে নগরের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর ১টায় বিএনপি মহাসচিব নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী একাত্তরের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রচারকেন্দ্র কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যাবার সময় নগরীর ষোলশহরে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতৃবৃন্দ পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়।
এছাড়া বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের বিভিন্ন সড়কে বিএনপিকে প্রতিহত করতে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বললে আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে। এরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে তারাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুছতে পারেনি।’
এ বীর চট্টলা থেকে বীরপুরুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি। পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া লাখো শহীদের কথাও স্বীকার করতে হবে।’

১৯৭১ সালে এ চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে হবে। এ সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন মন্ত্রীর ধমকে সরকার ডিগবাজি খেয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই।
মির্জা ফখরুল হুংকার দিয়ে বলেন, ‘তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে।
পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। অশালীন কথা বলবেন না। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা জনগণের বাহিনী। সাবধান হয়ে যান। আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। সেদিন জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।

আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। সরকার এখন বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ২০০৮ সালের জরুরি সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। অবৈধ সরকারের নানা কর্মকান্ডে মানুষ আজ হতাশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। এই সরকার দ্রব্যমূল্য কমাতে পারে না। কারণ তারা নিজেরাই সেই মুনাফা থেকে লুটপাটে ব্যস্ত।
মোশাররফ বলেন, আমরা যেতে চেয়েছিলাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে কিন্তু আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের যেতে দেয়নি। সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের বাধা দিয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আজ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন আওয়ামী লীগের কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা করেনি, এটাই তাদের একমাত্র ব্যর্থতা। তারা তখন আত্মসমর্পণ করেছিল। একমাত্র মেজর জিয়াউর রহমান সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ যেখানে পরাজিত, মেজর জিয়া সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন।
শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সকল বিদেশি গণমাধ্যমে সেদিন শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের বইতেও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন শুনেছিলেন। আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হল না ? কারণ আওয়ামী লীগ জানে, আমরা সেখানে যেতে পারলে এখানের চেয়ে অনেক বেশি লোক সমাগম হত। কিন্তু আজ ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে ২৭ মার্চ পালন করব। আগামী বছর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের সামনে পালন করব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার। আরও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।