আজন্ম সলজ্জ সাধ আকাশে অনেক ফানুস উড়াই

অভীক ওসমান »

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নিয়ে ফেসবুকে বেশ অ্যাকটিভ ছিলেন শেখর দস্তিদার। সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দেয়া, ইনস্টাগ্রাম করা সবকিছুতেই বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছিল। নিজের কাব্যকথা, রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃত করে ফেইসবুক বন্ধু, সতীর্থ শুভানুধ্যায়ীদের কাছে বেশ প্রেমপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
জনৈক মহুয়া ভট্টাচার্যকে একটা স্ট্যাটাসে শেখর লিখেছিলেন-
দেখলো সবাই রুক্ষ রুক্ষ চেহারাখান
শুনলো শুধু/নির্জলা সব সত্য কথায় তিক্ত ভাষণ
বুক গভীরের মমতাস্রোত/যায় না দেখা রাগী রাগী চোখ দুটোতে
… … … …
ধরবা নাকি বাজি/মরার আগে মমতার ঐ রেসে আমি
হার মানা হার খেলতে/নামতে আবার রাজি
[শেখর দস্তিদার ২০১৮]

নিজস্ব প্রতিকৃতির যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তার বিপরীতে প্রেমিকের অসম্ভব চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
২.
ঠিক চল্লিশ বছর আগে আমাদের শান্তিনিকেতন চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা ডিপার্টমেন্টে দীর্ঘদেহী, অনাড়ম্বর, হাতে সিগ্রেট নিয়ে আকাশের দিকে তাকানো স্বপ্নবান এক যুবককে আমি দেখেছিলাম। বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি স্বপ্ন দেখতেন, ভালাবাসতেন বন্ধু, সতীর্থদের। সব সময় কবিতার উচ্চারণ ছিল তার ঠোঁটে। আজন্ম সলজ্জ সাধ আকাশে অনেক ফানুস উড়াই। রবীন্দ্রনাথ তিনি জানতেন। কিন্তু তার প্রিয় কবি, পা-ব সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। “একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে/ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী।” অথবা আবুল হাসান, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
তার সাথে আমার সহমত। তার সাথে আমার বন্ধুত্ব কেমনে হলো। কেমিস্ট্রিটা তার প্রয়াণের পর ভেবেছি। আমরা দুজনই শিক্ষক পুত্র, শৈশবেই অনাথ, আমরা উভয়েই মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার স্বাপ্নিক। এখানেই হয়তো বন্ধুত্বের বীজ। শেখর আমার একবছর সিনিয়র ছিল- আমি তাকে ‘আপনি’ বলতাম, সে আমাকে ‘তুই’ বলতো। এ এক মধুর ব্যাপার। সে কি পাহাড় ভালোবাসতো, সমতল এড়িয়ে চলতো। বিয়ে করেছিল পাহাড়ি কন্যা। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ঘুরে যখন চট্টগ্রাম কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে এলো, তখন আমি চিটাগাং-চেম্বারের সচিব। এক রোদ ঝলোমলো প্রাতে তার কক্ষে যখন দেখা করি। তাকে বলেছিলাম, ‘আপনার কাছে যাতে কোনো তদবির নিয়ে আসতে না হয়।’ এরপর থেকে দু’দুবার বাঙলা উৎসব করলাম। এরপর থেকে মরণ পর্যন্ত যে সম্মান সমীহ আমাকে দেখিয়েছেন তার মধ্যে ম্যাচুরড ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন দেখেছি।
৩.
স্ট্যাটাস দেখলাম শেখর ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে, পার্কভিউ হাসপাতালে তার কর্কট রোগ ধরা পড়ে। পরে ভারত, সবশেষে মেডিকেল সেন্টারে মারা যায়।
ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাসে আমি লিখেছিলাম :
উঠে দাঁড়াও কমরেড…
“কিছুক্ষণ আগে প্রকাশক ও কবি মনিরুল মনিরসহ শেখর দস্তিদারকে মেডিকেল সেন্টারে দেখে আসলাম। তার রোগ সম্পর্কে সকলে অবগত আছেন। মধ্য সত্তরে শেখর চট্টগ্রাম কলেজে বাঙলা বিভাগে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন।
আমরা দুজনে ভিন্ন রাজনৈতিক দল করলেও পরস্পরের প্রতি সমীহ, আস্থা ও বন্ধুতা ছিল তুলনারহিত। আমি বাংলা সংসদের জিএস/ভিপি থাকা কালে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ডিপার্টমেন্টাল পিকনিক সমূহে অকুণ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি। তখন চট্টগ্রাম কলেজে শহীদ মিনারের স্ট্র্যাকচার ছিল না। আমরা সর্বদলীয়ভাবে একুশে পালন করতাম। এক্ষেত্রে আয়-ব্যয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি ব্যাপারে শেখর ও আমরা অত্যন্ত সৎ ও সতর্ক থাকার চেষ্টা করতাম।
জিয়া’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা এক রাতে উভয়েই চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অ্যারেস্ট হই। আমাদের প্রথম দর্শনার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আমার মামা আমাকে রিলিজ করতে চাইলেও আমি বললাম শেখরকে ছাড়া আমি বের হবো না।
শেখরের মেধা ছিল এবং সে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে অ্যাকাডেমিক জীবন শেষ করেছেন। তার হাতের লেখা বেশ নান্দনিক। সে লেখালেখি করতো, আমার মতো তারও প্রিয় কবি ছিলেন সুধীনন্দ্রনাথ দত্ত। তার সতীর্থ অনেকে লেখক হয়ে গেলেন, আর শেখর রয়ে গেলেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতো নিস্পৃহ।
বিপ্লবী পুর্ণেন্দু দস্তিদারের ভাই পো ও তার দিদি দেওয়ানজী পুকুরের বাসায় থাকতেন। আমাদের ৪৯ নম্বর ঘাটফরহাদবেগের বাসায় যাতায়াত, অন্ন গ্রহণ, ঈদে-চান্দে পূজা-পার্বণে উপহার ছিল গতানুগতিক ব্যাপার।
শেখর গভর্নমেন্ট কলেজের টিচিং প্রফেশন নিল। বাঙলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দু’দুবার বাঙলা উৎসব করলাম। এই উৎসবে তার অফিস, কলেজ ক্যাম্পাস, বাসায় আমাদের বন্ধুতার আদর-আপ্যায়নের যে দিনগুলো কেটেছে তা ছিল রাবীন্দ্রিকভাবে বর্ণিল। যা এখনও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে আছে।
শেখর দা, আপনার অগুনতি ছাত্র-ছাত্রী, বন্ধুরা, একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাম্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী সর্বোপরি সৎ মানুষের জন্য সবাই দোয়া করছেন।
কর্মিষ্ঠ বীর, উঠে দাঁড়াও আরেকবার।”
৪.
স্মৃতিচারণ করতে গেলে বলা যায়। আমার আনন্দ বেদনা প্রেম-অপ্রেমের সাথী ছিল। আমি তখন বাংলা সংসদের জিএস. কাপ্তাইয়ের আগে চন্দ্রঘোনা এলাকায় কর্ণফুলীর নদীর পাড়ে পিকনিক করার জন্য স্পট ঠিক করা হয়েছে। পিকনিকের আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ফ ম সিরাজউদ্দৌলা চৌধুরী পিকনিক স্পট ভিজিট করতে যাবেন, সাথে আমি। লিচুতলায় পিডিবির জিপ দাঁড়িয়ে আছে। স্যার অপেক্ষা করছেন। স্টুডেন্ট পলিটিক্স করি, মধ্যাহ্নে অভুক্ত। লিচুতলায় যেতেই স্যার বাঘের মতো গর্জন করে উঠলেন, ‘তুমি কেমন করে ভাবলে, আ ফ ম সিরাজউদ্দৌলা চৌধুরী তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকব।’ আমি বললাম, ‘চলে গেলেই পারতেন।’ কোত্থেকে শেখর দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে শান্ত করে বলল, ‘এমন করিস না পিকনিকটাই বরবাদ হয়ে যাবে।’ এরকমই ছিল সে।
১৯৭৬ সাল। জিয়ার স্বৈরাচারী বিবোধী আন্দোলনে, জাসদ-ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ আমরা চট্টগ্রাম কলেজে, নগরে, পুরো বাংলাদেশে ঐক্য পরিষদ করে আন্দোলন গড়ে তুলেছি। ১ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে রাতে আমাদের কর্মীরা ওয়ালিং (চিকামারা) করছিলো। ইউসুফ শিকদার (তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট), মুহাম্মদ ইসা (বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা), শেখর (তৎকালীন সহ সভাপতি ছাত্র ইউনিয়ন), আমি (প্রেসিডেন্ট বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগ) তদারক করছিলাম। রাত ৮ টার দিকে এসে পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাস ঘিরে ফেললো। আমাদের এ্যারেষ্ট করে নিয়ে যাবে। আমরা বললাম প্রিন্সিপালের পারমিশন ছাড়া আপনারা কলেজে ঢুকতে পারেন না, আমাদের নিয়ে যেতে পারেন না। তখন সিদ্ধান্ত হলো আমি এবং আরেকজন কলেজ সংলগ্ন প্রিন্সিপালের বাসায় যাবো। জিন্নাহ টুপি পরা প্রিন্সিপাল নাসিম বললেন, ‘আমি বলে দিচ্ছি তোমাদের ছেড়ে দেবে।’ কিন্তু কলেজে আসা মাত্র আমাদের চারজনকে ভ্যানে তুলে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসলো। আমাদের প্রথম ভিজিটর ছিলেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আমার মামা সরকার চাকুরে আমাকে স্বতন্ত্রভাবে “রিলিজ” করতে চাইলে আমি বলেছিলাম, ‘শেখর ছাড়া আমি বের হবো না।’ আমাদের বন্ডিং ছিল এরকম সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ।
৫.
শেখরের বাসা ছিল দেওয়ানজী পুকুর লেনে। চর্যাপদের টিলার মতো উঁচু এক জায়গায়। সে বাসায় শিখাদি, অজিত দা, এক বিধবা পিসি থাকতেন। আমরা বহুবার তার বাসায় কাঁসার বাসনে করে অন্ন গ্রহণ করেছি। এমন কি কাঁকড়া জাতীয় খাদ্যও খেয়েছি। অপরদিকে আমাদের ৪৯ নম্বর ঘাট ফরহাদবেগের কাছে জেনারেল হাসপাতালের এক ওয়ার্ডে আন্তর্জাতিক সংস্থার ‘আন্দেরি হেলপি’ নামক অন্ধত্ব নিবারণ এর জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল হোসেন চিকিৎসা কার্য চালাতেন। সেই ওয়ার্ডের নার্স ছিলেন শিখাদি। আমার খালা (কালাম চৌধুরীর মা) ছিলেন ড্রাগ রিয়েকশনের কারণে পুরো অন্ধ এক মহিলা। যার ফলে শিখাদি আমাদের বাসায় আসতেন, খেতেন এবং খালার পরিচর্যা করতেন। দিদি পরে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের মেট্রন হয়েছিলেন। একই সাথে শেখরেরও আসা যাওয়া ছিল অবাধ। এর ফলে আমার দুই পরিবারের মধ্যে সম্প্রীতির একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। শেখর ও আমরা সিনিয়র জুনিয়রদের একাডেমিকভাবে সাহায্য করলাম। স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ডিপার্টমেন্টে ছাত্রীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। যেখানে আমরা বান্ধবীরা শেখরের বন্ধু। শেখরের বান্ধবীরা আমাকে পছন্দ করতো। পূর্বে যে বলেছি সে ছিল স্বাপ্নিক। মূলত একজন কবি বাস করতো তার হৃদয়ে। ফেসবুকের যতগুলো কবিতা লিখেছে তা দিয়ে একটা কাব্যগ্রন্থ করা যায়। ইংরেজি শিক্ষক মুজিব রাহমান দস্তিদার ফ্যামেলির যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা অসাধারণ।
পার্ক ভিউ হাসপাতাল থেকে শিখাদি কে সাথে করে আমার গাড়িতে যখন দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসায় ড্রপ দিচ্ছিলাম, বা দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের মন্দিরে শেখরের লাশের গাড়ি যখন অপেক্ষা করছিল, তখন কাঁদতে কাঁদতে এই ভগিনি নিবেদিতা বলছিলেন, ‘শেখরের মতো ওসমান, কালামও আরো দুই ভাই ছিল। কালাম শ্মশানবন্ধু হয়েছিল।
মূলত আমাদের সম্পর্ক পুনর্জীবিত হলো জীবনের শেষ বেলায় এসে। ২০০৮ ও ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হয়। দুটো ইভেন্টেরই প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। শেখর চট্টগ্রাম কলেজে প্রিন্সিপাল হয়ে আসলে বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক চট্টগ্রাম কলেজে বাংলা উৎসব করার জন্য উৎসাহ দিতে থাকে। এর আয়োজনের পর্বে অধ্যক্ষ হিসেবে শেখরের কক্ষ চট্টগ্রাম কলেজ টিচার্স মিলনায়তন, চট্টগ্রাম কলেজ অডিটোরিয়ামসহ সর্বাত্মক লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছিল শেখর দস্তিদার। আয়োজনের প্রতিটি মিটিং-সন্ধ্যা হয়ে উঠতো নবীন-প্রবীণ ছাত্র-ছাত্রীদের মিলন মেলা। রসবোধসম্পন্ন শেখর দস্তিদার খুব দ্রুত তার অপরিচিত, অনুজ সতীর্থদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। সবশেষে ১৬ মার্চ ২০১২ শুক্রবার চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান করি। আমি ছিলাম এর প্রধান সমন্বয়কারী। এর জন্য গঠিত কমিটিটা ছিল নি¤œরূপ : প্রফেসর শেখর দস্তিদার(আহ্বায়ক), অভীক ওসমান (প্রধান সমন্বয়কারী), সৈয়দ উমর ফারুক (সদস্য সচিব), মোহাম্মদ আবদুস সালাম (যুগ্ম-সদস্য সচিব), লায়ন সন্তোষ কুমার নন্দী (অর্থ সচিব), গোফরান উদ্দীণ টিটু (প্রচার সচিব), শ্যামল বড়–য়া (সহ-প্রচার সচিব), শাকিল আহমেদ (সাংস্কৃতিক সচিব), নাছিমা শওকত (যুগ্ম-সাংস্কৃতিক সচিব), সৈয়দ মো. তৈয়ব (আপ্যায়ন সচিব)। আর এই কমিটির নির্বাহী সদস্যরা হলেন : সেবা চৌধুরী, কামরুন নাহার ঝর্না, শাহিনা বেগম রেবা, আনিস উদ্দিন মাহমুদ, কমরুদ্দিন আহমদ, মো. নুরুল আবচার, হাসনা হেনা চৌধুরী, দিদারুল মোস্তফা, বশির উদ্দিন কনক, চৌধুরী শাহজাহান, জিন্নাত পারভিন শাকী, চম্পাকলি বড়–য়া, ফাহমিদা বিনতে আজিজ, মোজাম্মেল মাহমুদ। এই আয়োজনে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।
এই অন্তর্মুখী মানুষ কোনো সভাসমিতিতে যেতেন না। কিন্তু বিশদ বাংলা আয়োজিত আমার কবিতার উপর আলোচনা এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে আমার কবিতা বিষয়ে এক দীর্ঘ একাডেমিক রিভিউ করেছিলেন।
৬.
শুধু আমার সাথে নয় মূলত বাংলা উৎসবে যারা শেখরের সতীর্থ ছিল না, ছাত্র-ছাত্রীও ছিল না, কিন্তু অনুজ শিক্ষার্থী ছিল শেখরের সাথে তাদের পরিচয়, সান্নিধ্য তাদের জীবনে খুব মূল্যবান হয়ে থাকবে। এজন্য যে একজন সৎ, নির্লোভ, সহাস্য, প্রীতিময়, কালচার কস্টিউমে সাধারণ, কিন্তু অসাধারণ মমতাবান এক মানবকে তারা চিনেছে। পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার প্রিয়তা বিস্তারিত হয়েছে। শেখর দস্তিদারদের ব্যাচের ফেয়ার ওয়েল আয়োজন করেছিল বাংলা সংসদ। সম্ভবত আমি তখন ভিপি। তিনি বলছিলেন, ‘বক্তৃতার সময় তুই কাঁদিস না।’ কিন্তু আমাদেরকে তো কাঁদতেই হলো। কর্কট রোগকে সাহসের সাথে মোকাবিলা করে চলে যাওয়াটা একজন দস্তিদার উত্তরাধিকার, মুক্তিযোদ্ধা, সাম্যের জন্য আজীবন লড়াকু সংগ্রামী মানুষের পক্ষেই সম্ভব। মনে পড়ে বরিস পলেভয়ের সেই বইটির নাম, ‘মানুষের মতো মানুষ।’

লেখক : কবি, নাট্যকার