আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নির্বাচনী ইশতেহার

ড. মো. মোরশেদুল আলম »

ইশতেহার ইতালীয় শব্দ ম্যানিফেস্টো বা ল্যাটিন ম্যানিফেস্টাম থেকে উদ্ভূত; যার অর্থ স্পষ্ট বা সুস্পষ্ট। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের মনোযোগ ও সমর্থন আকর্ষণের উদ্দেশে নানা প্রতিশ্রুতিসম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ ও প্রচার করে থাকে। নির্বাচনী ইশতেহার হলো নির্বাচনের পূর্বে জনগণের নিকট তুলে ধরা লিখিত ও মুদ্রিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী ইশতেহার এমন একটি প্রতিশ্রুতি যা একজন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের দ্বারা জনসাধারণের কাছে দেওয়া হয় এবং জয়লাভের পর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ সেøাগানে দলটি এবারের ইশতেহার ঘোষণা করে। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক অভিঘাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ বিশে^র বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা পাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রার মহাসড়কে রয়েছে। বিশ^পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। জাতীয় আয়ের মানদণ্ডে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশে^র ৩৩তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের ধারায় বিশ^দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ ২০২০’ ও ‘মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১’ উদ্যাপন ছিল স্বাধীন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা।

বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান, বিশ^দরবারে উচ্চ প্রশংসিত। ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুতের আলো। কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল সুবিধা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ‘আমার গ্রামÑআমার শহর’ এবং ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’, যা বিগত নির্বাচনের দুটো বিশেষ প্রতিশ্রুতি ছিল; তা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। অতি দরিদ্র ও দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন ও ক্রমসম্প্রসারণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রমিক-কৃষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় আজ বাংলাদেশ শতভাগ সফল, তা আমরা বলতেই পারি। উগ্র সশস্ত্র জঙ্গিবাদী কার্যক্রম বন্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। মানবাধিকার ও আইনের শাসন আজ সুরক্ষিত। দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বজায় রেখে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে সরকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো হলো : ১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মপোযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। এবং ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
বর্তমান অস্থিতিশীল ও জটিল বিশ^ব্যবস্থায় সকল দেশ যেখানে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তখন প্রিয় দেশ সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্দেশিত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এক শক্তিশালী ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধি ও বৈশি^ক শান্তির প্রতি তাঁর অবিচল অঙ্গীকারের সাক্ষ্য বহন করছে। বাংলাদেশ এখন অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে তরুণ সমাজের মেধা, সৃজনশীলতা ও অমিত শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ^ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’, ও ‘স্মার্ট সমাজ’Ñএ চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেই। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সপক্ষে সবসময়ই সোচ্চার। সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো চেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশে^ যে প্রোপাগান্ডা এবং মিসপ্রেজেন্টেশন রয়েছে, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকর ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবে। একইসাথে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।’ জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে মেধার ভিত্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। জনবান্ধব, স্মার্ট ও আধুনিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া বাহিনীগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সীমান্ত সড়কে সড়ক নির্মাণ করা হবে, যাতে করে সীমান্ত সুরক্ষাসহ সীমান্তের যে কোনো ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। এখন দেশে পত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ২৪১টি। ৩৩টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৩টি এফএম বেতার ও ১৮টি কমিউনিটি বেতার কেন্দ্র বর্তমানে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাংবাদিকরা যাতে নির্যাতন, ভয়ভীতি-হুমকি, মিথ্যা মামলার সম্মুখীন না হন, তার ব্যবস্থা করা হবে। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং অপব্যবহার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকদের জন্য দশম ওয়েজবোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। আওয়ামী লীগ সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশে^র দরবারে মর্যাদা অর্জন করেছে। এ সময়ে দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিও লক্ষ্যে কৃষিতে সহায়তা ও ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।

দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সারের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা আর্জনের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করা হবে। মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করা হবে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এছাড়া দেশের সকল নাগরিক যেন একই রকম স্বাস্থ্যসেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানি সম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যেই যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আওয়াম লীগ।
জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়-উপকরণ হবে নীতি সুদ হার ব্যবহার। কর্মপোযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণ করা হবে। আমাদনি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে। পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্য অবসান ও ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহাযতা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার প্রদান করে।
প্রতিটি গ্রামে আধুনিক গ্রাম সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া যুক্তিসঙ্গত ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও সম্প্রসারণ করা হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে অধিকতর পরিবেশবান্ধব করার জন্য পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা ও স্বায়ত্তশাসনের পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হবে। সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা তা অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান অনেক বেড়েছে। এই অগ্রগতিকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে দেখছে বিশ^। জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ঈপ্সিত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতার কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার শুধু অঙ্গীকারের ফানুস নয়; বরং তা দূরদর্শী, বাস্তবমুখী ও অর্জনযোগ্য। বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছিল, এর বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি সরকার গঠন করে, তাহলে ইশতেহারে বর্ণিত কর্মসূচিগুলো আওয়ামী লীগ বাস্তবয়নের মাধ্যমে একটি সুখী, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করবে; একথা আমরা বলতেই পারি।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়