অ্যাপভিত্তিক প্রতারণা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে

দিন যায় সময় বদলায়। সে সঙ্গে বদলায় প্রতারণার কৌশল। মানুষ ঠকানো, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার নানা ধরনের ফন্দি বের করতেই থাকে ঠকবাজরা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব অনেকদূর অগ্রসর হলেও প্রতারণা বন্ধ হয়নি অধিকন্তু প্রযুক্তিকেই প্রতারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বিপুল জনপ্রিয়। তাই প্রতারকরা এখন বেছে নিচ্ছে এই মাধ্যমকে।
বাংলাদেশে অ্যাপ খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট আটটি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় গত আগস্টে চীনের ৭ নাগরিকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যেমন ‘সান ওয়ালেট সিকিউর লোন’ নামের একটি অ্যাপ ব্যক্তিপর্যায়ে ৬ থেকে ২৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রস্তাব দিচ্ছে। অ্যাপটি চলতি বছরের এপ্রিলে গুগলের প্লে স্টোরে আসে। এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ভারতসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রায় ১৪টি দেশে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদ দেখিয়ে অবৈধ ব্যবসা চলছে। ভারতে এই ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতন আর অপমানের শিকার হয়ে অন্তত ৬০ জন আত্মহত্যা করেছে। উদ্বেগজনক দিক হলো, বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়ার অ্যাপ বাড়ছে। আর ওই সব অ্যাপ আইন মানছে না।
বাংলাদেশে অনুমোদনহীন ঋণ বিতরণ, অনলাইন জুয়া, অনুমোদনহীন ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন নিষিদ্ধ। নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান বাদে কেউ আর্থিক লেনদেন সেবার প্ল্যাটফর্মও চালাতে পারে না। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, অ্যাপে ঋণ, জুয়া ও ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মতো অবৈধ কাজ ঘটেই চলছে।
বাংলাদেশে ঋণের অ্যাপগুলোর ব্যবহার কতটা বাড়ছে, তা জানা যায় ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিমিলার ওয়েবে। তারা বাংলাদেশের যেসব আর্থিকবিষয়ক অ্যাপকে জনপ্রিয় হিসেবে উল্লেখ করেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্তত ৩২টি বাংলাদেশে অবৈধ। ক্যাশ বক্স, হ্যাপি মানি, কুইক অ্যান্ড সেফ, লোন ট্রাই, গাইড লোন ইত্যাদি অ্যাপ রয়েছে এই তালিকায়।
বিটিআরসি জানিয়েছে, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ২০ হাজার ৭৮২টি লিংক অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। লিংকগুলো রাষ্ট্রবিরোধী, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী, জঙ্গিবাদী, পর্নোগ্রাফি আধেয়, অনলাইন গেমিং, অনলাইন বেটিং বা জুয়া খেলা, সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী গুজবসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছিল।
বিটিআরসি আরও জানায়, গত ৯ মাসে আর্থিক প্রতারণা, জুয়া বা অনলাইন বেটিং-সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৯৪৭টি ওয়েবসাইট ও ৪৮টি অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জুয়ায় প্ররোচিত করা হয়, এমন ২ হাজার ৫টি ফেসবুক লিংক এবং ৪৩২টি ইউটিউব লিংক অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি বন্ধ হলে অন্য আরেকটি চলে আসছে। মানুষ ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
এখন মানুষ খুব দ্রুত ধনী হতে চায়। বৈধভাবে ও শুধু পরিশ্রম করে দ্রুত ধনী হওয়া যেহেতু সম্ভব নয় সেহেতু শর্টকাট পথ বেছে নিতে চায় তারা আর সে সুযোগটি কাজে লাগায় প্রতারকরা। তারাও প্রতারণার নিত্যনতুন জাল বিস্তার করে সাধারণ মানুষ সহজে বিভ্রান্ত হয়ে ধরা পড়ে জালে।
প্রথমে মানুষকে সচেতন হতে হবে। সে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।