চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো কিডনি রোগী পেল প্লাজমা ফেরেসিস

চমেক হাসপাতাল

এক মেশিনে ২০ ধরনের সেবা

নিলা চাকমা

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) কিডনি বিভাগে ‘এফেরেসিস’ মেশিনের সহায়তায় কিডনি রোগে আক্রান্ত আনিসুল আলমকে প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে চট্টগ্রামে এটিই ১ম কোনো কিডনি রোগীকে প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হলো। এ জন্য রোগীকে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। বেসরকারিভাবে এ ধরনের চিকিৎসা ব্যয় দাঁড়াতে পারে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।

গতকাল সোমবার চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের ‘রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের সহযোগিতায় আনিসুল আলমকে প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হয়। পরপর আরও ৩টি প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হলে তিনি সেরে উঠবেন বলেছেন চিকিৎসকরা।

২৭ বছরের এ তরুণ গত দশ বছর ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। বছর দুয়েক আগে তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো হয়। কিন্ত নিয়মিত ওষুধ না খাওয়ায় তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে দ্রুত চমেক হাসপাতালে ভর্তি করোনো হয়।

চিকিৎসকদের মতে, কিডনি প্রতিস্থাপন করলে দীর্ঘ সময় ধরে রোগীদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। তবে যারা ওষুধ খেতে অনিয়ম করেন তাদের রক্তের মধ্যে খারাপ এন্টিবডি জমে যায়। সেই এন্টিবডিকে পরিষ্কারের জন্য দরকার হয় প্লাজমা ফেরেসিসের। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা রোগীদের মধ্যে হাজারে ৫-৬ জনকে এই চিকিৎসা দিতে হয়। এতদিন এমন রোগীদের ঢাকা পাঠানো হতো। তবে চট্টগ্রামে এবার প্রথমবার কোনো কিডনি রোগীকে প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হয়েছে।

প্লাজমা ফেরেসিস দিতে দরকার হয় ‘এফেরেসিস’ মেশিন। শুধু প্লাজমা ফেরেসিস দিতে নয় মেশিনটি ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দিতে বড় ভূমিকা পালন করে। স্টিম সেল সংগ্রহ করা, করোনা রোগীদের প্লাজমা, টোইমমিউন, নিউরোলজিকাল, ট্রমাটিক রোগেও এই মেশিনটি ব্যবহ্রত হয়। গুলিয়ান বারি সিনড্রোম, মাইস্থেনিয়া গ্রেভিস মাল্টিপল , থ্রম্বোটিক, থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপিউরা, ইডিওপ্যাথিক, উইলসন ডিজিজ, অটোইমিউন হেপাটাইটিস, হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম, অটোইমিউন থাইরইডিটিস, হেলপপ সিনড্রোমমসহ কয়েকটি রোগের চিকিৎসাতেও মেশিনটি ব্যবহার করা যায়।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনার আগে এই মেশিন চমেক হাসপাতালে ছিলো না। করোনা রোগীদের প্লাজমা দেওয়ার জন্য ‘এফেরেসিস’ মেশিনের জরুরি প্রয়োজন পড়ে। তৎক্ষণাৎ মেশিনটি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে ধার নেয় কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি)। জুনের শেষ দিকে প্রথম মেশিনটি চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে স্থাপন করা হয়। পরে হাসপাতালের ব্যবহারের জন্য কেনা হয় মেশিনটি। এরপর ২০২১ সালের শুরুর দিকে একই বিভাগে যোগ হয় দ্বিতীয় ‘এফেরেসিস’ মেশিন। জার্মানির একটি কোম্পানি থেকে ৭৮ লাখ টাকা দিয়ে এটি কেনা হয়।

এ প্রসঙ্গে কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা বলেন, ‘বেশিরভাগ কিডনি রোগীদের প্লাজমা ফেরেসিস দিতে হয় না। তবে যাদের অবস্থা শোচনীয় কেবল সেসব রোগীদের এই সেবা দেওয়া হয়। এতদিন আমরা এমন রোগীদের ঢাকাতে প্রেরণ করতাম। এবার চমেক হাসপাতালে ‘রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের সহায়তায় একজন রোগীকে প্লাজমা ফেরেসিস দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে সরকারিভাবে প্রথমবার। এই সেবা দিতে ‘এফেরেসিস’ মেশিনের দরকার পড়ে। আমরা মেশিনটি রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ থেকে এনে কিডনি বিভাগে স্থাপন করি। কাজ শেষ হলে এটি রক্ত সঞ্চালন বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আনিসুলকে আরও ৩- ৫টি প্লাজমা ফেরেসিস নিতে হবে। আমরা আশা করছি দ্রুত সেরে উঠবেন। এখন থেকে এমন জটিল রোগীদের ঢাকা যেতে হবে না। চট্টগ্রামে সরকারি খরচে সেবাটি নিতে পারবেন।’

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সময় মেশিনটি আমাদের বিভাগে যোগ হয়। এই একটি মেশিন দিয়ে প্রায় ২০ ধরনের সেবা মিলে। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট দেওয়া, কিডনী রোগীদের প্লাজমাফেরেসিস, নিউরোলজিকালসহ কয়েকটি রোগে মেশিনটি ব্যবহার করা হয়। তবে এই সেবাটির বড় সমস্যা হলো কিটের দাম বেশি। একেক রোগের জন্য একেক ধরনের কিট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া যেগুলো সব রোগীদের কিনতে হয়। একেকটার জন্যে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সরকারিভাবে যদি কিট সরবরাহ করা যায় তাহলে রোগীরা অনেক উপকৃত হতেন। ’