অস্থিরতা কাটেনি মুরগির বাজারে

ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের পর কয়েকদিন নিম্নমুখী থেকে আবারও অস্থির ব্রয়লার মুরগির বাজার। গত বৃহস্পতিবার একটু কমে আসলেও দুই দিনের ব্যবধানে নগরের বাজারে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বারবার এ খাতে কেন ‘অস্থিরতা’ তা বলতে নারাজ মুরগি ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার বিকালে নগরীর রেয়াজউদ্দিন, বক্সিরহাট ও কাজীর দেউড়ি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, একেক বাজারে মুরগির দাম একেক রকম। গতকাল খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। যা গত দুদিন আগেও খুচরা বাজারে ব্রিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা কেজিতে। আর মুরগি সরবরাহকারীরা গতকাল পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ২১৮ থেকে ২২০ টাকা। তাছাড়া ব্রয়লার পাশাপাশি ঈদের আগের দরে বিক্রি হয়েছে সোনালি ও দেশি মুরগি। বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
কাজির দেউড়ি বাজারে মুরগি কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা মনগড়া দামে বিক্রি করছে। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে তারা ৫০ থেকে ৮০ টাকা বাড়িয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মুরগি কিনতে আসা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মুরগি কিনতে আসা। মুরগি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি দুই মাস আগে থেকেই। ব্যবসায়ীরা রোজার শুরুর আগে থেকেই নানা ইস্যুতে মুরগির দাম বাড়িয়েছে।’ রোজার দুদিন আগে রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২৭০ টাকায়, আর সোনালি মুরগি ৩৮০ টাকা। এরপর আরেক দফা বাড়িয়ে ২৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়, যা ঈদ পর্যন্ত ছিল। ঈদের পর কয়েকদিন কিছু দাম কমলেও এক সপ্তাহ পর আবারও তারা বাড়তি নিচ্ছে।
মুরগি সরবরাহকারী মোজাম্মেল হক বলেন, গত মাসে খামারিরা তেমন মুরগি উৎপাদন করেননি। যার ফলে চাহিদা অনুযায়ী সংকট রয়েছে। ফলে খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
একেক বাজারে একক দর সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিকাংশ মুরগি বিক্রেতারা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মামুন বলেন, ‘আমরা মুরগির দাম ফোনে বলতে চাই না। আপনারা অফিসে আসুন। তাছাড়া মুরগির সাইজভেদে নানা দরে বিক্রি করি। তাছাড়া পোল্ট্রির খামারের সাথে ব্যবহৃত মেডিসিন, খাবার, টিকা সকল ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে মুরগির দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মুরগির দর নির্ধারণে অনেক বিষয় আছে। আমরা ফোনে সব কথা বলতে চাই না।’
এদিকে ২৩ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠক এবং এফবিসিসিআই সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিলে বৃহৎ খামারিরা দাম কমিয়ে মুরগি বিক্রি শুরু করেছিলেন।
ওই বৈঠকের পর সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। এতে বলা হয়, দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এ দাম অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্য ব্যয় বাড়ার পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
এতে মার্চের শেষ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় দাঁড়ায়। একই সঙ্গে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু ঐ দামে তিনদিন বিক্রি করার পর ব্যবসায়ীরা আবার দাম বাড়িয়ে দেন।