অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড, শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশের হার

সুপ্রভাত ডেস্ক »

হতাশায় মোড়া বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচেও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারল না বাংলাদেশ। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় চাহিদানুযায়ী বড় হয়নি দলের সংগ্রহ। পরে বোলাররাও পারেননি প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার মতো কিছু করতে। অনায়াস জয়ে সেমি-ফাইনালের প্রস্তুতি সারল অস্ট্রেলিয়া।

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে শনিবার বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মিচেল মার্শের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩০৭ রানের লক্ষ্য ৩২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। খবর বিডিনিউজের।

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু অস্ট্রেলিয়ার টানা সপ্তম জয় এটি। পঞ্চাশ ওভারের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এটিই তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ২৯১ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।

বড় হারের পরও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় আপাতত আট নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুতে রোববার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে নেদারল্যান্ডস কোনো পয়েন্ট না পেলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের।

গত চার বিশ্বকাপের প্রতিটিতে অন্তত তিনটি করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের যাত্রা শেষ হয়েছে স্রেফ দুই জয়ে। ১৯৯৯ আসরে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেও দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। পরের আসর থেকে তারা ফিরেছিল বৃষ্টিতে পাওয়া ২ পয়েন্ট নিয়ে।

অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড গড়া জয়ের নায়ক মার্শ। তৃতীয় ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ইনিংসে তিনি করেছেন ১৩২ বলে ১৭৭ রান। ১৭ চার ও ১০ ছক্কার ইনিংসে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি।

রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। শুরুতেই ট্র্যাভিস হেডকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান তাসকিন আহমেদ। তবে এরপর আর তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।

দারুণ ব্যাটিং উইকেটে অনায়াসে রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্শ। দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১২০ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। ৬১ বলে ৫৩ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।

এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি মার্শ ও স্টিভেন স্মিথ। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ১৭৫ রান। বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার এর চেয়ে বড় জুটি আছে কেবল আর দুটি।

শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা মার্শ স্রেফ ৩৭ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। পরের পঞ্চাশ রান করতে তিনি খেলেন আরও ৫০ বল। তার ৮৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।

এরপর আরও চালিয়ে খেলেছেন মার্শ। অন্য প্রান্তে স্মিথও রান তুলেছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৬৩ রানে অপরাজিত থেকেছেন স্মিথ। আর মার্শ খেলেছেন বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১০ ওভারে ৮৫ রান দিয়েছেন নাসুম আহমেদ। বিশ্বকাপে এক ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে বোলিং এটি। ২০০৭ আসরে ৮৬ রান দিয়েছিলেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক।

ম্যাচের প্রথমভাগে ভালো শুরু পেলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। টস হেরে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন তানজিদ, লিটন দাস। শুরুতে কয়েক ওভার সাবধানী ব্যাটিংয়ের পর হাত খুলে মারতে শুরু করেন তারা।

পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬২ রান করে বাংলাদেশ। এই সময়ে গড়ে ১ ডিগ্রি সুইংও পাননি অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলার। দ্বাদশ ওভারে তানজিদের বিদায়ে ভাঙে ৭৬ রানের জুটি। ৬ চারে ৩৪ বলে ৩৬ রান করেন তানজিদ।

দলকে একশ পার করিয়ে উইকেট ছুড়ে আসেন লিটন। অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে আলতো করে খেলা শটে তিনি ধরা পড়েন লং অফে। তানজিদের মতো লিটনও খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। ৪৫ বলে ৫টি চার মারেন তিনি।

দুই ওপেনার ফিরলেও রানের গতি কমতে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু এই জুটিও বড় হয়নি। অবস্থা যখন ভালোর দিকে, ঝুঁকিপূর্ণ দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন ৫৯ বলে ৬ চারে ৪৫ রান করা শান্ত। নিজের ওপর ক্ষুব্ধ শান্ত ফেরেন ড্রেসিং রুমে।

এরপর মাহমুদউল্লাহও করেন দারুণ শুরু। তৃতীয় বলেই শন অ্যাবটকে দারুণ পুল শটে ছক্কায় তিনি খোলেন রানের খাতা। এরপর মিচেল মার্শের এক ওভারে তিনি মারেন আরও দুটি ছক্কা। তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে রান আউটে।

শর্ট কাভারের দিকে ঠেলেই দ্রুত রানের জন্য ছোটেন হৃদয়। মার্নাস লাবুশেনের দারুণ থ্রোয়ে বিদায়ঘণ্টা বাজে ৩২ রান করা মাহমুদউল্লাহর। চলতি আসরে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনশ পেরোনো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মোট সংগ্রহ ৩২৮ রান।

মাহমুদউল্লাহ ফেরার আগেই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন হৃদয়। ৬১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় এই মাইলফলক পূর্ণ করেন প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা তরুণ ব্যাটসম্যান। খানিক পরেই জ্যাম্পার বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম।

পরে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেও অ্যাবটের ফুল টসে ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানার কাছে ধরা পড়েন হৃদয়। দলের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৭৭ বলে ৭৪ রান করেন তরুণ ব্যাটসম্যান। দলকে তিনশ পার করিয়ে ২০ বলে ২৯ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন অ্যাবট ও জ্যাম্পা। চলতি আসরে জ্যাম্পার মোট উইকেট হলো ২২টি। বিশ্বকাপের এক আসরে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের এটিই সর্বোচ্চ শিকার। ২০০৭ সালে ব্র্যাড হগ নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৮ (তানজিদ ৩৬, লিটন ৩৬, শান্ত ৪৫, হৃদয় ৭৪, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মুশফিক ২১, মিরাজ ২৯, নাসুম ৭, মেহেদি ২*, তাসকিন ০*; হেইজেলউড ৭-১-২১-০, কামিন্স ৮-০-৫৬-০, অ‍্যাবট ১০-০-৬১-২, মার্শ ৪-০-৪৮-০, হেড ৬-০-৩৩-০, স্টয়নিস ৫-০-৪৫-১)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৪.৪ ওভারে ৩০৭/২ (হেড ১০, ওয়ার্নার ৫৩, মার্শ ১৭৭*, স্মিথ ৬৩*; তাসকিন ১০-০-৬১-১, মেহেদি ৯-০-৩৮-০, নাসুম ১০-০-৮৫-০, মিরাজ ৬-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ৯.৪-১-৭৬-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল মার্শ