অল্প গাড়িতে বাড়তি ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহেশখালীতে থাকা দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কারণে চট্টগ্রামজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গ্যাসের সংকট। এতে গ্যাসচালিত সব ধরনের গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চালকরা। আর রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে গাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মানুষ তুলনামূলক কম বের হয়েছে। কিন্তু মানুষের অনুপাতে গাড়ির সংখ্যা আরও কম। ফলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো গাড়ি দেখলেই ছুটছে। এরমধ্যে গ্যাস চালিত বাসের সংখ্যা কম থাকায় বেশি বিপাকে পড়েছেন যেসব রুটে বাসের চলাচল নেই সে সব যাত্রীরা। নগরীর দীর্ঘতম টেম্পোর রুট হিসেবে হালিশহর বিডিআর মাঠ থেকে চকবাজারে আসা টেম্পুগুলো বেশ পরিচিত। এছাড়াও বারেক বিল্ডিং মোড় থেকে চকবাজার রুটের টেম্পোর রুটও বেশ দীর্ঘ। এই দুটি রুটের টেম্পো চালকদের দেখা যায়, তারা নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে তিন দফায় রাস্তায় চলাচল করছে। ফলে যাত্রীদের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
এ নিয়ে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শুভ্র বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিদিন অফিসে চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ সিএনজিচালিত টেম্পোতে আসা-যাওয়া করি। সকালে এক আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে একটি টেম্পো পাই। অফিসের দেরি হওয়া এড়াতে উঠা-নামা বাবদ ১৫ টাকার শর্তে উঠে পড়ি। কিন্তু গাড়ি গন্তব্য না গিয়ে থামলো লালখান বাজার। এরপর আরেক গাড়িতে চড়ে অফিসে পৌঁছাই। ২২ টাকার বদলে গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়েছে ৪০ টাকা।
নির্মলা সেন নামে আরেক পথচারী বলেন, ‘আমি আমান বাজার থেকে দেওয়ানহাট আসি। প্রতিদিন টিউশনির জন্য এখানে আসা হয়। গাড়ি সংকট থাকতো না। এখন প্রায় এক ঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। একই সাথে আসতে স্বাভাবিক ভাড়া থেকে ১২ টাকা বেশি নিয়েছেন তারা।’
এ প্রসঙ্গে চকবাজার থেকে বারেক বিল্ডিং রুটের টেম্পো চালক রাসেল উদ্দীন বলেন, ‘সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) দিয়ে আমাদের টেম্পোগুলো চলতো। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এই গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সবাই জানে ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে, বিপর্যয় ঘটবে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকতেই পারে। কিন্তু গ্যাস না থাকার বিষয়টি আমাদের আগে জানানো উচিত ছিলো। এই গাড়ি দিয়ে আমাদের পেট চলে। গ্যাস না থাকায় আজ আধাবেলা গাড়ি বন্ধ ছিলো। এখন গাড়ি চলছে এলপিজি গ্যাস দিয়ে। এলএনজিতে ১৭ লিটারে ৭০০ টাকায় সারাদিন গাড়ি চলতো। এখন সেই ১৭ লিটারে ৩৭০০ টাকা গুণতে হচ্ছে। যার কারণে গাড়ি ভাড়ার দাম বেড়েছে।
নির্ধারিত গন্তব্যে না যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে এলপিজি গ্যাস পেয়েছি। পরেরবার পাবো তার নিশ্চয়তা কি রয়েছে? গ্যাস সংরক্ষণের জন্য বাধ্য হয়ে আমাদের যাত্রা কমাতে হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে বিকাল ৪টার দিকে টাইগারপাস ফিলিং স্টেশনে দেখা যায় গ্যাসের জন্য গাড়ির লম্বা গাড়ি লাইন। সেখানে সিএনজি এবং টেম্পো চালকরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। প্রবেশ এবং বের হওয়ার দুটো গেটই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেতরে শুধুমাত্র একটি- দুটি গাড়ি ঢুকিয়ে সর্বোচ্চ ৫ লিটার করে এলপিজি গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। গেইটের বাইরে গ্যাস না পাওয়া নিয়ে চালকদের মাঝে হট্টগোল দেখা দেয়। তারা বার বার দাবি করছিলেন গ্যাস বন্ধ থাকবে একথা কেন তাদের আগে বলা হয়নি। অন্তত তারা কিছুটা হলেও গ্যাস মজুদ করতে পারতো। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাফেলতির কারণে এসব হয়েছে। আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আগে না জানানোর প্রসঙ্গে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) প্রকৌশলী মো.রফিকুল ইসলাম জানান, ‘গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে পত্র-পত্রিকায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেজিডিসিএল থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তারা যদি না পায়, সেটা তো কর্তৃপক্ষের দোষ নয়। তবে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি আগামী ৪-৫দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’