অমর একুশে বইমেলা : তৃতীয় দিনের আয়োজনে রবীন্দ্র উৎসব

হুমাইরা তাজরিন »

বইমেলার তৃতীয় দিনও ছিলো উৎসবমুখর। পছন্দের বই বেছে নিতে পাঠকেরা আসছেন বইমেলায়। এবার পাঠকদের বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে প্রবন্ধে।
পছন্দের বইটি ব্যাগ ভর্তি করতে করতে সাহেদল আলম বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে পড়ার ভীষণ আগ্রহ ছিলো। তবে গুছিয়ে কোথাও পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আজকের মেলায় এসেই মিল্টন কুমার দেবের ‘১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী’ বইটা নজরে পড়লো। যতটুক দেখলাম ভালো লাগলো। তাই নিয়ে নিলাম। এছাড়া আরও কয়েকটি বই নিয়েছি।’
গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি ছিলো বইমেলার তৃতীয় দিন। তবে ছুটির দিনগুলোর তুলনায় লোক সমাগম ছিলো কম। এরপরও ছায়াঘেরা শিরীষতলায় পাঠকরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরছেন, বই দেখছেন, কিনছেনও। বই কেনা ছাড়াও, অনেকেই এসেছেন অনুষ্ঠান দেখতে। গাছতলায় পাতানো লাল বেঞ্চিতে বসে একের পর এক পরিবেশনা উপভোগ করছেন দর্শকরা। এছাড়া অনেকে তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বইমেলার নতুন সংযোজন শিশু কর্নারে। যেখানে শিশুদের প্রিয় কয়েকটি রাইডে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আশপাশের পিঠা, ফাস্ট ফুড ও নানা রকম খাবারের দোকানেও ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
তৃতীয় দিনের আয়োজনে ছিলো রবীন্দ্র উৎসব। উৎসবকে সাজানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গানের দলীয় পরিবেশনা, দলীয় নৃত্য, একক সংগীত ইত্যাদি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কঙ্কন দাশ। রবীন্দ্র উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ ওমর ফারুক, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম বাকলিয়ার কাউন্সিলর মো. শহিদুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বহুদিন ধরে বহুদেশে বইমেলার সূচনা হয়েছে। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের আগস্টে সূচনা হয়েছিলো। ‘রক্তাক্ত বাংলা’ একটি বই প্রকাশিত হয়েছিলো। যেখানে অনেক বিশিষ্টজনরা লিখেছিলেন। আমারও লেখা ছিলো। এই ভাষাকে বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ যখন লিখেন তখন ভারত ব্রিটিশদের অধীন। তাঁর জীবনস্মৃতি বইতে নিজের ছোটবেলার কথা লিখেছেন। তিনি কী লিখেননি? বিশ্বের সেরা ছোটগল্পকারদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের নাম থাকবে। তিনি নাটক লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ রূপক নাটকের একজন অসাধারণ শিল্পী। তেমনি তিনি একজন অসাধারণ ঔপন্যাসিক। তিনি নৃত্যনাট্য লিখেছেন, গীতিনাট্য লিখেছেন। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেননি। রবীন্দ্রনাথের গান যখন আমরা শুনি, জাগতিক কষ্ট ভুলে স্বর্গীয় অনুভূতি উপভোগ করি। আজকের এই বইমেলা পূর্ণতা পাক, এই কামনা করি।
ধারাবাহিক আয়োজনে আগামী দিন থাকবে নজরুল উৎসব।
তৃতীয় দিনে প্রকাশিত হয়েছে নতুন কয়েকটি বই। যার মধ্যে আছে অক্ষরবৃত্ত থেকে প্রকাশিত রুবেল কান্তি নাথের থ্রিলার উপন্যাস অঘোরী, সুমন্ত গুপ্তের ভ্রমন উপাখ্যান ভ্রমি শ্রীভূমি। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আশানুর রহমানে উপন্যাস ‘লেলিন’, ঢাকার বইমেলায় প্রকাশের পর যেটি দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ওয়াসি আহমেদের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রগতিশীলতার ইচ্ছে পূরণ’, মিল্টন কুমার দেবের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ’, কাজী সাজিদুণ হকের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘আনাগোনা খানাপিনা’, আফসানা বেগমের ‘নারীর গল্প ও নারীবাদী ছোটগল্প ’।