রেলপথে ঝুঁকিপূর্ণ ১৬৮ স্থান চিহ্নিত

চট্টগ্রাম বিভাগ

রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কমানো হচ্ছে রেলের গতি
অতিরিক্ত ১১৫৭ জন পুলিশ-আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বিভাগে রেলপথে ১৬৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেললাইন কেটে উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনায় এ সার্ভে করা হয়েছে। চিহ্নিত স্থানগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে নিয়মিত বাহিনীর সদস্যসহ আরও ১ হাজার ১৫৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন ও রাতে রেলের গতি কমিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক পাহারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা একটা সার্ভে করেছি। ওখানে ১৬৮টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ওখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা মূলত যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যের সহযোগিতায় তৎপর রয়েছি। জনবলের কিছু সংকট আছে। সেই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। উনারা ১ হাজার ১৫৭ পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা নিচ্ছেন। এছাড়া রাতের ট্রেনগুলো চলাচলে গতি কমিয়ে দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ রেলপথগুলোতে কয়েক ঘণ্টা পরপর ট্রলি চালিয়ে দেখা হচ্ছে।

রেলসূত্রে জানা যায়, নাশকতা প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা কাজ করছেন। এর বাইরে যে ওয়েম্যানরা রেলপথ পরিদর্শনের দায়িত্বে আছেন। নাশকতা প্রতিরোধে তারা সবাই একসাথে কাজ করছেন। কিন্তু রেলের এ বিশাল নেটওয়ার্ককে সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন। কেননা যাত্রীবেশে কেউ ট্রেনে উঠে নাশকতা করলে, সেটা প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারাই এ ধরনের কাজ করছে, তাদের প্রতিরোধে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা দরকার। এজন্য প্রচার-প্রচারণা চলছে।
১৬৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে রেলের একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রেলওয়ে ট্রাকগুলো ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার সদস্যদের মাধ্যমে দিনে এবং রাতে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে প্রতি এক ঘণ্টায় সর্বনিম্ন একবার করে পেট্রোলিং করা হয়। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য প্রতিটি কন্ট্রোল অফিসে কর্তব্যরত ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার স্টাফদের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া বিশেষ করে রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাকগুলো নিবিড়ভাবে পাহারার ব্যবস্থার বিষয়ে মনিটরিং করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রয়োজনে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও এসএসএই/ওয়েগণের অধীন স্টাফদের সমন্বয়ে অ্যাডভান্স পাইলটিংয়েরে ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর ট্রলি ও লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্টেশন মাস্টার, পরিদর্শকরা ও এসএসএই/ওয়েগণ নিজ নিজ এলাকায় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে নিয়মিত কন্ট্রোল অফিসকে অবহিত করবেন। প্রত্যেক ডিইএন, এইএন এবং এসএসএই/ওয়েগন তাদের অধীন ওয়েম্যানদের এলাকা উল্লেখ করে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ডিভিশনাল কন্ট্রোলে সরবরাহ করবেন। ডিভিশনাল কন্ট্রোলের মোবাইল নম্বরগুলোও স্টাফদেরকে সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে কন্ট্রোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার বিষয়েও বলা হয়েছে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে রেল কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেলপথে ৪৭টি অবৈধ ক্রসিং রয়েছে। এসব এলাকায় ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হতে না হতেই রেল বিটের নাট-বল্টু খুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচলও ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ট্রেন যাওয়ার আগে রেলপথে ট্রলি রান করা প্রয়োজন। রেলের অবকাঠামো রক্ষায় নিয়োজিত কি-ম্যান ও মেট, আরএনবি ও রেলওয়ে পুলিশে জনবল পর্যাপ্ত নেই। তাই এ সংকট নিরসনে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।