সুপ্রভাত ডেস্ক »
মুসলিম উম্মাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা নিয়ে আবার ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ-এশা দেশের মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ভোর রাতে সেহরি খেয়ে রোজা রাখা শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। আজ শুক্রবার হবে প্রথম রোজা। এই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল (২৬ রমজান) মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় রমজানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
দেশে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে দেশের ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, রমজানের মহান শিক্ষা সমাজের সকল স্তরে ও সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। রমজানের পবিত্রতায় সবার জীবন ভরে উঠুক। মহান আল্লাহ আমাদের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত দান করুন।
এদিকে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছলতা ও সংঘাত পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসুন আমরা জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। সব রকম কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি। সিয়াম পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করি ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকি। তিনি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তিনি সবার হেফাজত কামনা করেন।
আলেমরা জানান, দীর্ঘ ১১ মাসের পাপ পঙ্কিল থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এই রমজান। পবিত্র রমজানের আগমনে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট সাফল্য সৃষ্টি হয়। রমজান মাস হলো ইবাদতের বসন্তকাল। আল্লাহপাক ইবাদতপাগল বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য সব আয়োজন করে রাখেন। এ মাসে একটি ফরজ আমলের মূল্য অন্য সময় ৭০টি ফরজ আমলের সমপরিমাণ।
পবিত্র রমজান মাসে সারা দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে খতমে তারাবি পড়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। দেশের সব মসজিদে খতমে তারাবির নামাজে প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে এবং পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র শবে কদরে কোরআন খতমের জন্য সারা দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লিসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে এ জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিসি ও ইউএনওদের সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চালের কোনও অভাব নেই। চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ২০টি স্থানে পহেলা রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রমে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে বিক্রয় করা হবে।
সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, মিরপুরের কালশী, খিলগাঁও রেলগেট, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুরের বসিলা, উত্তরার দিয়াবাড়ি, যাত্রাবাড়ি, গাবতলী, হাজারীবাগ, বনানীর কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীরচর ও রামপুরায় এই বিক্রয় কার্যক্রম চালু থাকবে।