বই উৎসব: সীমিত সামর্থ্যে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ

সোমবার নতুন বছরের প্রথম দিনটি উদ্ভাসিত হয়েছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে। শিশু থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয় এদিন। টানা ১১ বছর ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সরকার। বছরের শুরুতেই এ কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করতে পারার জন্য শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এবার সারা দেশে ৪ কোটি সাড়ে ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি নতুন বই। সে সঙ্গে পাঁচ নৃগোষ্ঠীর শিশুদেরও তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় ছাপানো বই দেয়া হয়। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ব্রেইল বই।
এবার মাতৃভাষার পাঠ্যবই দেওয়া হয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৯ হাজার শিশুকে। বান্দরবানের সাতটি উপজেলার তিনটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী মাতৃভাষার পাঠ্যবই পেয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীকে সোমবার বই তুলে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার জন্য ২০১৭ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৮ হাজার ৯৯০ জন শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বছর নতুন ক্লাসে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই আলাদা। আর সে বই যদি হয় বিনামূল্যে তাহলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে এক ধরনের সর্বজনীনতাও আছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অনেকেরই নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তারা আগে পুরনো বই দিয়েই বছর পার করত। আমাদের সময়েও তাই হতো। এখন সবার হাতেই নতুন বই। তাই উৎসবমুখর পরিবেশে সর্বস্তরের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শামিল হয়।
এটি আসলেই একটি বড় উৎসব। চার কোটি ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে একদিনে ৩৫ কোটি বই তুলে দেওয়া সহজ কাজ নয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যাই নেই চার কোটি। তবে বইয়ের মান নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ করে থাকেন অনেকে। তবে সবার মনে রাখা দরকার এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কখনও কখনও গাফেলতি বা দুর্নীতিও যে হয় না তা কিন্তু নয়। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। এ কার্যক্রমের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে কীভাবে একে সফল করা যায় সেদিকেই এখন সরকারের মনোযোগ রাখা দরকার।
বিনামূল্যের বই গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের স্বস্তি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হবে । আমরা আশা করব, শুধু বিনামূল্যের বই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছু করার আছে। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়াসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্য সমস্যাগুলোর যদি প্রতিকার করা যায়, তাহলে এ দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিতটি শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারবে। এ বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমও চালু হচ্ছে। একটি সভ্য জাতি গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে
যা একটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।