চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে উভয় দেশ লাভবান হবে

চট্টগ্রাম চেম্বারে ভারতীয় হাই কমিশনার

‘বন্দর ব্যবহারের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ এমনকি ভুটান, নেপালও উপকৃত হতে পারে’

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশ বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে উদিত হচ্ছে। এ অঞ্চল ২৫০ কোটি মানুষের বাজার, চট্টগ্রাম যেখানে প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ এমনকি ভুটান, নেপালও উপকৃত হতে পারে, এতে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হতে পারে।
তিনি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালকমণ্ডলী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
ভারতীয় হাই কমিশনার আরও বলেন- বাণিজ্য, সামুদ্রিক ও উৎপাদন খাত চট্টগ্রামে অগ্রগণ্য। প্রতিবেশীদের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের উপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই সেবা, উৎপাদন ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বকে টেকসই করতে হবে।
তিনি দীর্ঘমেয়াদির পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি সেক্টর যেমন লজিস্টিকস, বন্দর, অবকাঠামো, যোগাযোগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসায়ী নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা, বে-টার্মিনালে অর্থায়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ রয়েছে। তিনি সীমান্তে আইসিডি, ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রেললাইন উন্নয়ন ও স্থলবন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএম’র এমডি আমীর আলীহুসেইন, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা ও ডা. মুনাল মাহবুব, বেইস টেক্সটাইল এর ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার শাহাদাত (শোভন), গ্রিনগ্রেইন গ্রুপের এমডি শাকিল আহমেদ তানভীর, ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামের এমডি রাশিখ মাহমুদ ও মার্কস বাংলাদেশের তানিম শাহরিয়ার।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি উভয় দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন। এছাড়া সাগর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে মালামাল পরিবহন, রেলপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থল বন্দরসমূহে জটিলতাসমূহ সহজীকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য খালাসের গতি ত্বরান্বিত করা, ইলেক্ট্রনিক ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে স্থলবন্দরসমূহকে আরও বেশি ডিজিটালাইজ করা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সহায়তাকরণ, ভারত-বাংলাদেশ বার্ষিক বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে যৌথভাবে ল্যাবরেটরি বা টেস্টিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন চেম্বার সভাপতি।
চেম্বার পরিচালক এস এম. আবু তৈয়ব দু’দেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উভয় দেশের পণ্য নিয়ে ‘ট্রেড শো’ আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
বক্তারা স্থলবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় শেড নির্মাণ, উভয় দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন, সাফটা সার্টিফিকেট গ্রহণ, সার্টিফিকেট অব অরিজিন জটিলতা দূরীকরণ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি চালুকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়ন, বর্ডার ট্রেড বৃদ্ধিকরণ, এন্টি ডাম্পিং বাতিলকরণ, ট্যারিফ ও নন ট্যারিফ বাধা দূরীকরণ, যৌথভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও যৌথভাবে শিপ বিল্ডিং খাতের উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি, রাষ্ট্রদূতের পত্নী সংগীতা দোরাইস্বামী, দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি দীপ্তি আলংঘট, চেম্বার পরিচালক মো. আবদুল মান্নান সোহেল ও মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত কাস্টম কমিশনার আবু নুর রশিদ আহমেদ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. সরোয়ার হোসেন, লুব-রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালাউদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আহমেদ আলী, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র পরিচালক আলতাফ হোসেন ভূঁইয়া ও বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম রেজা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
¬