বিজ্ঞান : গ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, গ্যালাক্সি, গ্রিনহাউজ গ্যাস

সাধন সরকার :

গ্রহ

ছোট্ট বন্ধুরা, আমাদের সকল শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য এবং তার চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহ-উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু, ধূলিকণা ও গ্যাস নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত। ইংরেজি ‘প্লানেট’ শব্দের অর্থ হলো ভ্রমণকারী। কোনো নক্ষত্রের (যাদের আলো আছে) মাধ্যকর্ষণজনিত আকর্ষণে তার চারদিকে পরিক্রমণশীল (ঘুরতে থাকা) মহাকাশীয় জ্যোতিষ্কই হলো গ্রহ। মহাবিশে^র যে বিশালাকার বস্তুগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে তাকে গ্রহ বলে। গ্রহের নিজম্ব কোনো আলো নেই। নক্ষত্রের আলোতে আলোকিত হয়। আমাদের পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হলো চাঁদ। সৌরজগতে আটটি গ্রহ রয়েছে। সূর্যের নিকট থেকে ক্রমান্বয়ে দূরের গ্রহগুলো হলো : বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন।

গ্রহাণুপুঞ্জ

এক গ্রহ থেকে অন্যগ্রহের মধ্যে রয়েছে বিশাল ফাঁকা জায়গা যা কোটি কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে নেই কোনো গ্রহ। সৌরজগতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহ রয়েছে। মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী এগুলোর অবস্থান। মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে রয়েছে অতিবিস্তৃত ফাঁকা জায়গা। আর এ ফাঁকা জায়গায় রয়েছে অসংখ্য মহাজাগতিক বস্তু যা গ্রহাণু নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক গ্রহাণুর কক্ষপথ সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। আর অসংখ্য গ্রহাণুর সমাবেশকে গ্রহাণুপুঞ্জ বলে।

গ্যালাক্সি

মহাবিশে^র একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে গ্যালাক্সি। অনেকগুলো নক্ষত্র মিলে একটি গ্যালাক্সি তৈরি হয়। মহাকাশে অসংখ্য জ্যোতিষ্ক দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে নক্ষত্ররাজি, গ্রহ-উপগ্রহ, বাষ্পকু- নিয়ে মাধ্যকর্ষণ শক্তির প্রভাবে জ্যোতিষ্কদের  ছোট ছোট জগৎ থেকে বিভিন্ন দল তৈরি হয়েছে। সব জ্যোতিষ্কম-লীর এক একটি জগতকে গ্যালাক্সি বলে। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ভেতর দিয়ে তাকালে মহাকাশের কোথাও কোথাও বস্তুপুঞ্জের সমন্বয়ে বড় বড় দল গঠিত হয়েছে বলে মনে হয়। মহাকাশের এই জাতীয় বিশেষ বৃহৎ দলের সমষ্টিই গ্যালাক্সি। গ্যালাক্সিগুলো আয়তনে কয়েক হাজার থেকে লক্ষ আলোকবর্ষ পর্যন্ত হতে পারে। গ্যালাক্সির আকারেও আছে নানা বৈচিত্র্য।

সাধারণত একটি গ্যালাক্সি দশ মিলিয়ন হতে এক শ মিলিয়ন নক্ষত্র ধারণ করে। মজার বিষয় হলো, ছোট গ্যালাক্সিগুলোতে এক বিলিয়নের কাছাকাছি নক্ষত্র থাকে, এগুলোকে বামন গ্যালাক্সি বলে। বড় গ্যালাক্সিতে একশ বিলিয়নের কাছাকাছি নক্ষত্র থাকে, এগুলোকে দানব গ্যালাক্সি বলে।

আমাদের সৌরজগৎও একটি গ্যালাক্সির মধ্যে আছে। এই গ্যালাক্সিকে বলে মিল্কিওয়ে। মিল্কিওয়ে  দেখতে সর্পিলাকার (সাপের মতো প্যাঁচানো)!

গ্রিনহাউজ গ্যাস

কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড, ওজোন ও জলীয় বাষ্প,  ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন, হাইড্রোফ্লুরো কার্বনসমূহ- এই কয়টি বায়বীয় পদার্থগুলোকে গ্রিনহাউজ গ্যাস বলা হয়। কারণ এরা পৃথিবীর জন্য একটি গ্রিনহাউজ হিসেবে কাজ করে। গ্রিনহাউজ হলো এক ধরনের ঘর যা কিনা কাচ বা  সে রকম স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে বানানো। সূর্যের আলো এই কাচ দিয়ে ঢুকে ঘরের  ভেতরের তাপ বাড়িয়ে তুলে এবং এই তাপ ঘর থেকে বের হতে পারে না। শীতের দেশে এভাবে গ্রিনহাউজ বানিয়ে তার ভেতর বিভিন্ন সবজি ও ফুল গাছের চাষ করা হয়। গ্রিনহাউজ গ্যাস পৃথিবীর জন্য এই কাচের ঘর হিসেবে কাজ করে। সুর্যের আলো যখন আসে, আলোর সাথে আসে তাপ (ইনফ্রা- রেড ফ্রিকোয়েন্সিতে) যা কিনা পৃথিবীতে এসে প্রতিফলিত (প্রতিবিম্ব আকারে ফিরে আসে) হয়।

পৃথিবীর সকল বস্তু এই সূর্যের আলো থেকে তাপ শোষণ করে। এই যে তাপমাত্রা বাড়ল, গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলির কারণে এই তাপমাত্রা পৃথিবীর বায়ুম-লের ভেতরে আটকে থাকে এবং এই কারণেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে। তাপ ধরে রাখার এই ঘটনাকে গ্রিনহাউজ প্রভাব বলে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা  বেড়ে যাচ্ছে। ভূপৃষ্ঠের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। দুর্যোগ বাড়ছে। গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো তাপ শোষণ করে নিজের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলে এবং এটি কোনো খারাপ কিছু নয়। কারণ গ্রিনহাউজ গ্যাস না থাকলে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকত পৃথিবীর তাপমাত্রা এবং অনেক প্রাণী ও গাছের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। কিন্তু মানুষেরা মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদন করার কারণে পৃথিবীর বায়ুম-লে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতিবছর আগের থেকে বেড়ে যাচ্ছে।

বায়ুম-লে গ্রিনহাউজ গ্যাসের ঘনত্বের মূল উৎস হলো- প্রাকৃতিক এবং মানুষের কর্মকা-। এছাড়া ব্যবহৃত হয়ে যাওয়া বস্তুর (বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকযৌগে রূপান্তরের) পরিমাণও এক ধরনের উৎস।গ্রিনহাউজ প্রভাব নিয়ন্ত্রণের উপায়ও রয়েছে। যেমন : জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাাস, রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস, মিথেন নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস, পরিকল্পিত বনায়ন, বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহার, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নবায়নযোগ্য শক্তির (যা শেষ হয় না যেমন- পানি, বায়ু, সৌরশক্তি ইত্যাদি) প্রসার ইত্যাদি।