পেকুয়ায় সাম্মাম চাষে সফলতা

এস এম জুবাইদ, পেকুয়া

বিদেশি উচ্চমূল্যের ফল সাম্মাম নিয়ে ২ বিঘা জায়গার উপর ট্রায়াল প্রজেক্ট শুরু করে মেডিকেল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। ছিমছাম এবং পরিপাটি বাগানে ফলবতী গাছে ঠাসা এক বাগানের মালিক কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের পালাকাটা এলাকার ডাক্তার নুরুল আমিন ও রাশেদা আমিনের পুত্র নজরুল ইসলাম। তিনি ঈযরহধ তযবহমুযড়ঁ গবফরপধষ টহরাবৎংরঃু র ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। দুই বছর আগে শখের বশে শুরু করা সাম্মাম বাগানটি থেকেই এখন তাঁর আয় লাখ টাকা, যেটি এখন তার আয়ের প্রধান উৎস।
সরেজমিনে, তার কাছে গেলে কাজের ফাঁকে স্বপ্ন পূরণের গল্প শুনান স্বপ্নবাজ মেডিকেল পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আরব দেশের মরুর উদ্ভিদ সাম্মাম এক সুস্বাদু ফলের নাম। যা এখন নদী মাতৃক বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় ভালভাবে চাষ হয়। চায়নাতে পড়া অবস্থায় সেখানে এ ফলটির চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশেও চাষ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশে ছুটিতে আসি, এরপর থেকে করোনার প্রকোপ শুরু হয় সারা বিশ্বে। করোনা প্যান্ডেমিকের কারণে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু করে। করোনা প্রকোপটা আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে ছড়ায়। একের পর এক স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়াতে বেকার যুবকরা তখন বিভিন্ন জুয়া-আড্ডায় তাদের জীবন অতিবাহিত করছিলো। তখন আমি পরিকল্পনা করলাম কীভাবে এসব থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা যায়। তখন পরিকল্পনা করি এগ্রো প্রজেক্ট নিয়ে। এও চিন্তা করলাম এলাকার পরিত্যক্ত জমিগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। অনেকের সাথে এ বিষয়ে মতামত চাইলে সবাই অনাগ্রহ দেখায়। পরে নিজ উদ্যোগে ডক্টরস এগ্রো ফার্ম নামে আমার প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি। প্রথমে আমি পোল্ট্রি, ফিসারিজ ও লাইভ স্টক খামার করি। এরপরে বিদেশি উচ্চমূল্যের ফসল নিয়ে ২ বিঘা জায়গার উপর আমার ট্রায়াল প্রজেক্ট শুরু করি। যার লক্ষ্য ছিলো কীভাবে বিদেশী ফসল দেশে আবাদ করা যায় এবং বিভিন্ন উপকারী অনুজীব এবং বিভিন্ন রকমের সার জৈবিকভাবে নিজস্ব ফার্মে তৈরি করা। অবশেষে ৫ মাস পরীক্ষামূলক চাষ শেষে দেখলাম বিদেশি ফসলগুলো কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেশেই ভালোভাবে চাষ করা যাচ্ছে এবং ভালোই ফলন দিচ্ছে। এরপর আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বানিজ্যিকভাবে আমার ফার্মের যাত্রা শুরু করি।
২০২২ সালে ১০ বিঘা জায়গা নিয়ে সাম্মাম, ক্যাপসিকাম সহ উচ্চমূল্যের বিভিন্ন ফল-সবজি চাষাবাদ শুরু করি এবং সফল হই। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ২৫ বিঘা জায়গার উপর ডক্টরস এগ্রো ফার্মের কার্যক্রম চলমান। ডক্টরস এগ্রো ফার্মের উৎপাদিত ফলের মান বিদেশি ফলের মত। রকমেলনের মিষ্টতা ব্রিক্স ১২-১৫ ডিগ্রী পর্যন্ত হয়েছে যা দেশে ভালোই সাড়া ফেলেছে। প্রচুর শীত ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় এই ফল চাষ করা যায় বলে জানান তিনি। এই ফলের রোপন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত ৬৫ দিন সময় লাগে। প্রথমে দেশি চারা নিয়ে চাষ শুরু করি। এলাকার লবণাক্তের কারণে চারাগুলো মারা যায়। আবার বীজ নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছি। আমি এ সাম্মাম চাষে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হইনি, চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। চলতি মৌসুমে সব গাছেই ফলন এসেছে। নিজের খামারে উৎপাদিত প্রতি কেজি সাম্মাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। ক্ষেতের পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য ৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে এই খামারে। ইতিমধ্যে ছয় লক্ষ টাকার মত সাম্মাম বিক্রি করেছি।
আমার লক্ষ্য বিদেশী ফলের চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে এসব ফল চাষ করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং এলাকার বেকারত্ব হ্রাস করে যুবসমাজকে আধুনিক কৃষিতে সংযুক্ত করা। যাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তরুনদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনারা বেকার বসে না থেকে আধুনিক কৃষিতে উদ্যোগী হোন এবং উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করুন। যতই কঠিন কাজ হোক হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না, সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম আর ধৈর্য দিয়ে সব কিছুকে সহজ করা যায়। সফলতা পাওয়া যায়। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই। ইতোমধ্যে এখানকার সাম্মাম কৃষিমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানায়। পরিত্যক্ত জায়গায় বিদেশি ফল উৎপাদন করে পেকুয়াকে সারাদেশে ও বহিবিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছৈয়দ আলম বলেন, তাকে নানা ধরনের ট্রেনিং ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাম্মাম ফল বছরে চার বার চাষ করা যায় এক জমিতে। প্রতিবার চাষ করতে সার, বীজ ও মাচার জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, সাম্মাম ফলটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। এ ফলটি উচ্চ মূল্যের। পেকুয়ার ইতিহাসে এই প্রথম চাষ। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাষ করার চেষ্টা করছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সার-কীটনাশক দেওয়ায় তারতম্য হলে গাছের নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় মারা যায়। সাম্মাম চাষে সফল হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।