এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি চড়া দামে

গ্যাস সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে নগরীর বিভিন্নস্থানে গ্যাস সংকটের দোহায় দিয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস। এতে সিলিন্ডার সরবরাহকারী, পাইকার ও খুচরা দোকানিরা দুষছেন একে অপরকে।

জানা যায়, সম্প্রতি মহেশখালীতে সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল সাময়িক বন্ধ রাখা হওয়াতেই নগরীর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) গ্যাস সরবরাহ বন্ধ সাময়িক ছিল। গতকাল সোমবার সকাল থেকে গ্যাস সংযোগ চালু করা শুরু করলেও এখনো নগরীর প্রায় এলাকায় কেজিডিসিএল গ্যাসের সংকট রয়েছে। যার ফলে গ্রাহকরা দ্বিতীয় উপায় হিসেবে বেঁচে নিয়েছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার।

গতকাল নগরীর বাকলিয়া, কোতোয়ালি, চকবাজার, ডবলমুরিং, বন্দর থানাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় খুচরা দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের প্রতি সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। যা দুদিন আগেও ১১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এদিকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া বাজারে ৩৫ কেজি ও অনান্য প্রায় কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাস সংকট রয়েছে বলে জানান সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বহদ্দারহাট এলাকার মো. তানভীর মাহমুদ নামের এক সিলিন্ডার ক্রেতা ক্রেতা বলেন, তিনদিন ধরে বাসায় লাইনের গ্যাস নেই। গ্যাসের সংকট ক্ষণস্থায়ী সময়ে কাটবে মনে করে রোববার সারাদিন পরিবার নিয়ে পাউরুটি খেয়েছিলাম। আর না পেরে রোববার সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে দেখি প্রতি সিলিন্ডারে ৫০০ এর উপরে বাড়তি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। যেসকল সিলিন্ডার ১১২০ টাকা বিক্রি করতো এক লাফে তা বিক্রি করেছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা করে। তবুও একটি কেনার পর তাদের কাছে ক্যাশমেমো চাইলে ক্যাশমেমো দেয়নি বিক্রেতারা।

কোতোয়ালি পাথরঘাটার আশরাফ আলী রোডের মো. জয়নাল উদ্দিন বলেন, নগরীর কোথাও তিনদিন ধরে গ্যাস ছিল না। আজ (সোমবার) সকাল থেকে অনেক এলাকায় গ্যাস আসলেও এখনো অনেক স্থানে আসেনি। তাই সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতারা তিন থেকে চারশো টাকা বাড়তি দরে সিলিন্ডার বিক্রি করছে। রোববার রাতে একটি সিলিন্ডার কিনি ১৫৭০ টাকা দামে। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১১৫০ টাকা দরে।

সায়েদ চৌধুরী নামের একজন বলেন, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিলিন্ডার গ্যাসের অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। শুধু গ্যাস নয়, রান্নার সাথে জড়িত নানান পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হচ্ছে সব জায়গায়। এসব বন্ধে বাজার মনিটরিং খুব জরুরি হয়ে গেছে।

এদিকে নগরীর এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের ডিলার, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে সিলিন্ডারের যোগান সংকটে রয়েছে। যার ফলে একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দুয়েকদিনের মধ্যে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদী তারা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের এলপিজি গ্যাসের পাইকার জসিম এন্টারপ্রাইজ এর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা ডিলার থেকে বাড়তি দামে কিনেছি। যার ফলে কয়েকশো টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিলাররা দাম কমালে আমরাও কমাবো। আজকে অন্যান্য কোম্পানির এলপিজি গ্যাস নেই। ওমেরা কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছি ১৩৫০ টাকা দরে।

চাক্তাই রোডের পিএম এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার বলেন, কয়েকদিন দরে গ্যাসের দাম বাড়তি চলছে। যার ফলে বাড়তি দরে বিক্রি করছি। স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে।

এদিকে হালিশহরের এক এলপিজি গ্যাস সরবরাহকারীর ক্যাশমেমো অনুযায়ী দেখা যায়, রোববার পাইকারদের কাছে তারা ১২ কেজি ওজনের বেক্সিমকো কোম্পানির এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছেন ১১৮০ টাকা দরে।

সিলিন্ডারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে একাধিকবার নানা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে প্রায় সরবরাহকারী ফোন রিসিভ করেননি। অনেক সরবরাহকারী তাদের ফোন বন্ধ রেখেছেন।

সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অস্বীকার করে হালিশহরের এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আল মদিনা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. নাবিদ বলেন, ‘আমরা ফোনে গ্যাসের দর বলতে পারছি না। আপনারা আমাদের অফিসে আসেন। গ্যাসের মূল্য নিয়ে অনেক হিসাবনিকাশ আছে। আমরা কোন ধরনের দাম বাড়াইনি। সরকার ঘোষিত মূল্য ১২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও আমরা গতকাল (রোববার) সিলিন্ডার প্রতি ১১২০ টাকা করে বিক্রি করছি। এসব কারসাজি করছে বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতারা। তারা তাদের মনগড়া দরে বিক্রি করছে। আমাদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই। বাড়ালে ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করবে।’

কেজিডিসিএল-এর তথ্যমতে, সারাদেশে গ্যাসের দৈনিক মোট চাহিদা ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মহেশখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। মহেশখালী থেকে আসা গ্যাস চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে বাকি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে আবাসিকের জন্য চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হলেও বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে সমগ্র চট্টগ্রামে পাইপলাইনের মাধ্যমে দেয়া আবাসিকের গ্যাস সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে।