৫ ঘণ্টার অবরোধে দীর্ঘ যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সলিমপুরের অবৈধ দখলদারদের শোডাউন

নিজস্ব প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড »

এবার প্রশাসনকে নিজেদের শক্তি দেখালো সীতাকু-ের জঙ্গল সলিমপুরের অবৈধ বসতিরা। জানা গেছে, বসতিদের উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানের পর সেখানে পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে জঙ্গল সলিমপুরে প্রবেশের ছয়টি পথ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর গত রোববার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশাল ফোর্স নিয়ে শোডাউন দেয়া হয়। এবার সেখানকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পাঁচঘণ্টা আটকে রেখে নিজেদের শক্তি দেখালো। এসময় পুলিশের সাথে অবৈধ দখলদাররা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মহাসড়ক থেকে তাদের সরাতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে পুলিশকে। পাঁচ ঘণ্টার অবরোধে সৃষ্ট হওয়া প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় দুপুর ১২টার দিকে। সীতাকু-ের জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের অবৈধ বাসিন্দারা ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়কে প্রথমে ব্যারিকেড দেয়। এসময় কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় উঠে আসার সাথে সাথে রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মোড়ে এসে জড়ো হয়। আর এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। দুপুর ১২টা থেকে সৃষ্ট হওয়া এই ব্যারিকেড শুরুর পর সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকু- সার্কেল) আশরাফুল করিম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম ও সীতাকু- মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারী নারী পুরুষ তা না মেনে বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে সড়কের উপর বসে পড়ে। পরবর্তীতে দুপুর দুইটার দিকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হোসেন। তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে অবরোধকারীদের পাথর নিক্ষেপ করে বাধা দিতে থাকে। এতে গ্রামবাসী ও অবরোধকারীদের সাথে ধাক্কা ধাক্কি হয়। অবশেষে পুলিশের লাঠিচার্জের সাথে গ্রামবাসীযুক্ত হয়ে অবরোধকারীদের পাথর নিক্ষেপ করলে তাড়া খেয়ে সীতাকু- আলী নগরে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর সড়ক অবমুক্ত হলে যান চলাচল শুরু হলেও স্বাভাবিক হতে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় নেয়।

সড়ক অবরোধকারীরা জানান, আমাদের কোথাও জমি কিনে ঘর করার সামর্থ্য নেই, পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা হয়। যারা আছে তাদের গত এক মাস আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটে চরম কষ্টে দিনযাপন করছি। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছি।

সীতাকু- মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, প্রশাসনের পক্ষ হতে তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তারা মানতে বাধ্য না। ঘটনাস্থলে আমাদের ৫০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশের অপেক্ষারত অবস্থায় গ্রামবাসীদের সাথে অবরোধকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, ‘তারা বিদ্যুতের দাবিতে বায়েজিদ সড়কে আন্দোলন করছিল। কিন্তু কারও প্ররোচনায় হঠাৎ করে ফৌজদারহাট ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসে অবস্থান নেয়। এতে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এক পর্যায়ে অবরোধকারীদের সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের দৌড়ানি দেয়। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধাওয়ায় অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, সীতাকু-ের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে গুটি কয়েক সন্ত্রাসী বাহিনী সরকারি পাহাড় দখল করে তা কেটে সমতল করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে গড়ে তুলে অবৈধ শত শত বসতি ও স্থাপনা। সরকারের প্রায় ৩ হাজার ১শ’ একর পাহাড় দখল করে নেন কয়েকজন সন্ত্রাসী বাহিনী। সেখানে বাস করতে থাকে চুরি, ডাকাতি, খুন ও সন্ত্রাসী কার্যে নিয়োজিত অপরাধী চক্র। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সলিমপুর ঘিরে মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। আর তা বাস্তবায়নে অবৈধ দখলদারীদের উচ্ছেদ করে জায়গা উদ্ধারপূর্বক সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা করার পরিকল্পনা মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদারকীতে সন্ত্রাসের জনপদখ্যাত জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হয়। প্রথম অভিযানে অবৈধ দখলদারীরা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে শত শত ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।