৫০-এ সোলস

সুপ্রভাত ডেস্ক »

শিরোনামটা চটকদার বিজ্ঞাপনের মতো ঠেকছে হয় তো। আবার কেউ ভাবতে পারেন, ব্যান্ডটি গীতিকবিদের রিয়েলিটি শোয়ের লাইনে দাঁড় করালো! আপাতদৃষ্টে দুটোই সত্য। তবে উদ্দেশ্য একেবারে ভিন্ন। সোলস ব্যান্ডের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, সর্বাধিক তারকা তথা মিউজিশিয়ান জন্ম দিয়েছে এই ব্যান্ড, সঙ্গে সর্বাধিক মানসম্মত গানও। যার ধারাবাহিকতা চলছে এখনও।তবে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, এবার সেই আগল খুলে দিলেন ব্যান্ড কর্তারা। ভাবলেন, অন্যদের ভাবনাটাও এবার যুক্ত হোক ব্যান্ডের সমৃদ্ধ ইতিহাসে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ঘোষণা দুটি। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন তিনটি লোগো উন্মোচনের আয়োজন করেছে ব্যান্ড সোলস। মঙ্গলবার রাজধানীর এক অভিজাত ক্লাবে এই আনুষ্ঠানিকতা হয়। লোগো তিনটি সবার সামনে উন্মোচন করেন সোলস-এর প্রাক্তন তিন সদস্য নেওয়াজ, পিলু খান ও র‌্যালি। এসময় পাশে উপস্থিত ছিলেন ব্যান্ডের বর্তমান সদস্যরা।

পার্থ বড়ুয়া জানান, তিনটি লোগো তৈরি করা হলেও এরমধ্যে শ্রোতা-দর্শকদের ভোটে একটি লোগো চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা লোগো তিনটি ব্যান্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছি। ১৫ জুন পর্যন্ত যে লোগোটি দর্শক-শ্রোতাদের সর্বাধিক রায় পাবে, সেটিই চূড়ান্ত হবে। যা ব্যবহার করা হবে ব্যান্ডের অফিসিয়াল প্যাড, কনসার্ট ব্যাকড্রপ, গান ও অ্যালবামে।’ এরপর পার্থ বড়ুয়ার আহ্বানে দলটির সঙ্গে শুরু থেকে সংযুক্ত থাকা দেশের অন্যতম গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ঘোষণা দেন গীতিকবিতা প্রসঙ্গে। তিনি জানান, সোলস-এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, আগামী এক বছর প্রচুর নতুন গান তৈরি করে প্রকাশ করবে দলটি। সেই লক্ষ্যে খোঁজা হচ্ছে মানসম্পন্ন গীতিকবিতা। মূলত সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সোলস-এর অংশীদার হতে পারবেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা যে কোনও বাংলাদেশি, যারা গান লিখতে আগ্রহী।

জঙ্গী বলেন, ‘সোলস-এর শুরুর দিকে যখন আমরা ব্লুনাইল হোটেলে গানবাজনা করতাম, তখন অসংখ্য গীতিকবি এসে অপেক্ষা করতো। তাদের লেখা গান দেখানোর জন্য। এবং আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ৫০ বছরের ক্যারিয়ারে সোলস কখনও লিরিক নিয়ে কম্প্রোমাইজ করেনি। সমৃদ্ধ কথা-সুরের গানই করেছে। সেই সোলস ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবার গীতিকবিদের উল্টো আহ্বান করছে তাদের জন্য গান লেখার। আমি মনে করি, এটা দারুণ একটা সুযোগ।’সোলস জানায়, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ংড়ঁষংভরভঃু@মসধরষ.পড়স ঠিকানায় যে কেউ লিরিক পাঠাতে পারবেন। সেখান থেকে ১০টি লিরিক বাছাই করে তৈরি হবে গান ও ভিডিও। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে ২০২৪ সালের মধ্যে।

৫০ বছর অতিক্রম করা দলটির নেতৃত্বে শেষ ৩২ বছর ধরে হাল ধরে আছেন পার্থ বড়ুয়া। সঙ্গে আছেন আরেক জ্যেষ্ঠ সদস্য নাসিম আলী খান। বর্তমান লাইনআপে আরও আছেন আহসানুর রহমান আশিক (ড্রামস), মীর শাহরিয়ার মাসুম (কিবোর্ড) ও মারুফ হাসান রিয়েল (বেজ গিটার)। সোলস-এর ৫০ বছর পূর্তিতে লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন সদস্য ও রেনেসাঁর বর্তমান সদস্য পিলু খান। তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘যে কোনও ব্যান্ড টিকিয়ে রাখার জন্য দুটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলনেতাকে হতে হবে কমপ্লিট মিউজিশিয়ান এবং নেতৃত্বের অধিকারী। আমি খুবই আনন্দিত, আমরা বের হওয়ার পর সোলস একইভাবে টিকে আছে তেমনই একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান পার্থ বড়ুয়ার নেতৃত্বে। এটা বজায় থাকুক।’

এরপর সোলস সদস্যরা জানান, ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরব্যাপী বেশ কিছু প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে রয়েছে সোলস ও রেনেসাঁ ব্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে গান তৈরি করা। দুটি গানের কাজ প্রায় শেষ। যা চলবে নিয়মিত।

সোলস ব্যান্ডটিকে বাংলাদেশ রক মিউজিকের মহাবিদ্যালয় বলা যায়। কারণ, গত ৫০ বছরের ইতিহাসে এই ব্যান্ড জন্ম দিয়েছে তপন চৌধুরী, নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, পিলু খানসহ অসংখ্য মিউজিশিয়ান। নেতৃত্বেও ছিলো ধারাবাহিকতা। তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু হয়ে দলটির হাল কাঁধে নেন পার্থ বড়ুয়া।

মঙ্গলবারের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে পার্থ বড়ুয়ার প্রতি প্রশ্ন ছিলো যদি সোলস-এর হাল ছেড়ে দেন তাহলে নেতৃত্ব নেবে কে? কারণ, এখন তো সেই পরম্পরা নেই। যেমনটা ছিলো তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু আর পার্থ বড়ুয়াদের মধ্যে। জবাবে বললেন, ‘আমাদের মধ্যে যোগসূত্র ছিলো বটে। আমরা একে অপরের ছায়া ধরেই বেড়ে উঠেছি। কিন্তু দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া বা কাঁধে নেওয়ার বিষয়টি তো ছিলো সময়ের হাতে। পরিকল্পিত না। ধরুন তপন দাকে ছাড়া যখন সোলস ভাবাই যেতো না, তখনই তিনি ছেড়ে দিলেন। বাধ্য হয়েই হাল ধরলেন বাচ্চু ভাই। আবার বাচ্চু ভাই ছেড়ে যাওয়ার পর আমাকে ধরতে হলো, খুবই ছোট বয়সে। ফলে আমি গেলে কে হাল ধরবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু বলে রাখি, সোলস এভাবেই কিন্তু শতবছর এগিয়ে যাবে। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে। সেই প্র্যাকটিস এই দলটির ভেতরে প্রবাহমান।’

পার্থ বড়ুয়ার প্রতি আরেকটি জিজ্ঞাসা ছিলো। দেশের ব্যান্ড মিউজিকে বর্তমান অবস্থা, কপিরাইট জটিলতা, প্রযোজকহীনতা, ওপেন এয়ার কনসার্ট জটিলতা; এতো প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও কাজ করার দম পাচ্ছেন কিভাবে! জবাবে বললেন, ‘দেখুন সব ঠিক ঠাক থাকলে কিন্তু আর ফাইট করার সুযোগ থাকে না। আমরা সারাটাজীবন যা কিছু ভালো সৃষ্টি করেছি, তার পুরোটাই ছিলো সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে। এই যে ৫০ বছর নিয়ে এতো বড় বড় পরিকল্পনা করছি, তার পুরোটাই স্পন্সর ছাড়া। মানে আমরা জানি না, টাকাটা পাবো কোথা থেকে। কিন্তু এটা জানি, কাজগুলো আমাদের করতে হবে। এটাই তো আসলে মিউজিক সৃষ্টির মজা।’

শেষে ভক্তদের প্রতি পার্থর অনুরোধ, সবাই যেন গানটা শোনেন। ভালো গানের সঙ্গে থাকেন। বাকিটা তারাই এগিয়ে নেবেন। তার মতে, ‘এখন আমাদের চেয়ে বেটার ব্যান্ড ও মিউজিশিয়ান আছে দেশে। তারা অসম্ভব ভালো কাজ করছে। ফলে ব্যান্ড মিউজিক শেষ, সেটা ভাবা ভুল হবে। মনে রাখবেন, বাংলার বাতাসে বাউল সংগীত ও ব্যান্ড মিউজিক; দুটোই দোলে সমান্তরালে।’