লোডশেডিং ও মূল্যস্ফীতির কষ্ট কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি দুটোই অসহনীয়’ মন্তব্য করে এ দুই কষ্ট প্রশমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠক হয়। চীন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে হওয়া ঋণ চুক্তি এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় বিদেশি অর্থের ব্যবহার বাড়োতে বৈঠকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রবণতা অসহনীয়।’
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলায় এমনিতেই গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। তার মধ্যে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে লোড শেডিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে।

প্রতিদিন চাহিদের তুলনায় ঘাটতি থাকছে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোড শেড করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
এদিকে সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে ক্রমশ বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির পারদ। মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯৪ শতাংশ, যা এক যুগের সর্বোচ্চ।

এ বিষয়ে একনেকে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতি কেন এত বেশি হবে’। তিনি মনে করেন, দেশে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য বাজারে যেতেই পণ্য মূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশে কৃষকের কাছ থেকে বাজারে যেতে যেতে যেভাবে কৃষিপণ্যের মূল্য বাড়ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

কৃষি পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমাতে প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক সংরক্ষণাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে মান্নান বলেন, ‘তিনি বলেছেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ইত্যাদি পচনশীল পণ্যের সংরক্ষণাগার গড়ে তোলেন।’ কৃষিমন্ত্রীর প্রতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’

আর বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে বৈঠকে আশার বাণী এসেছে জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে উপস্থিত বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা ক্লিয়ার হবে। আমরা আশা করি এটা ক্লিয়ার হবে।’

ডলার সংকট কমানোর বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মান্নান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বিদেশ থেকে জি টু জি অনেকগুলো ঋণ নিই, যেমন- ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট, বা চীনা জি টু জি ঋণ, এগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই কারণে এগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। একটি হচ্ছে আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি (এসব ঋণ) ব্যবহার করব। তাদের পক্ষের কোনো ব্যর্থতা থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে যেন কোনো গাফিলাতি না হয়।

‘আর এই মুহূর্তে যেহেতু আমরা বিদেশি মুদ্রার চাপের মধ্যে আছি। সুতরাং বিদেশি মুদ্রায় যদি ঋণ আসে, তাহলে আমাদের সাশ্রয় হবে কিছুটা।’

সরকারপ্রধানের ওই নির্দেশনার সূত্র ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (সংশ্লিষ্টদের) উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা প্রকল্পগুলা প্রক্রিয়া করেন, প্রসেস করেন, বিদেশি ঋণভিত্তিক যেগুলা আসতেছে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন, যাতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার চাপটা একটু কমে।’

মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথাও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন।

সে প্রসঙ্গ ধরে মান্নান বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, মিতব্যয়ী, সাশ্রয়ী হতে জবে, দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে, জমি ফেলে রাখা যাবে না। অপচয় রোধ করতে হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িসহ সব ধরনের ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনে ‘আরও গভীরে গিয়ে পরীবিক্ষণ’ করা হবে। যেমন, একজন যুগ্ন সচিব গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পেলে তিনি কত সিসির গাড়ি পাবেন, এ ধরনের ব্যয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে।