১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন

‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তারা হয়তো আর ১০/১৫ বছর আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন, নাও থাকতে পারেন। ১৯৭১ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারা দিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের পরাস্ত করতে শুরু করে। ফলে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি।’
১ ডিসেম্বরকে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবিতে গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর ইউনিট কমান্ড, জেলা ইউনিট কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নগর ও জেলা কমিটি আয়োজিত মানববন্ধন-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হলে অবিলম্বে পহেলা ডিসেম্বরকে সরকারিভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ ঘোষণার বিকল্প নেই। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক হতে হবে।’
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা আগে রাষ্ট্র সম্মান থেকে বঞ্চিত ছিল। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে যথেষ্ট আন্তরিক। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার প্রথা চালু করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীতকরণসহ তাদের চিকিৎসা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ সর্বত্র সম্মানিত হচ্ছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বিগত ১২ বছরে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমরা সকলে সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হলে আগামী ২০৪১ সালের আগেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন-সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এফএফ আকবর খান, যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহিদ হোসেন, জেলা সংসদের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দিন, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম আলাউদ্দিন, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বদিউজ্জামান, চন্দনাইশ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরো, সাতকানিয়া কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের এলএমজি, লোহাগাড়া কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার আহমেদ সিকদার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, নগর কমিটির আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজীশ ইমরান, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল, সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল প্রমুখ।
মানববন্ধন-সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর ও জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার, থানা-উপজেলা সংসদের কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার, সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নগর ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন-সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ বলেন, কতিপয় ভূমিদস্যু সারাদেশে বধ্যভূমির জায়গা দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে বধ্যভূমিগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সগুলোর কাজ দৃশ্যমান করা জরুরি। ১৯৭১ সালে যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করেছিলাম ঠিক সেভাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে।
একইসাথে বিজয়ের এ মাসে রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিজ্ঞপ্তি